ছোট ফেনী নদীর ভয়াবহ ভাঙনে বিলীন হয়ে যাচ্ছে রাস্তা ও জনপদ। ফেনী সীমানায় নোয়াখালীর মুছাপুর ব্লুইসগেট (রেগুলেটর) না থাকায় নদীর পানি নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না, ফলে দিন দিন ভাঙনের তীব্রতা বেড়েই চলেছে। এর সরাসরি প্রভাবে ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলার সদর ইউনিয়নের জগতপুর গ্রামে একের পর এক বাড়িঘর ও আবাদি জমি চলে যাচ্ছে নদীগর্ভে।
বিলীন হয়ে গেছে একসময়ের গুরুত্বপূর্ণ ফাজিলেরঘাট-তালতলি সড়ক। আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন নদীতীরবর্তী এলাকার বাসিন্দারা। অনেকেই পিত্রভূমি ছেড়ে শহরে বাসা ভাড়া নিয়ে চলে গেছেন নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে।
গত সোমবার (২ জুন) বিকেলে ভাঙনকবলিত ছোট ফেনী নদীর ফাজিলেরঘাট অংশ পরিদর্শন করেন দাগনভূঞা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) স.ম আজহারুল ইসলাম। তিনি বলেন, ভাঙনরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড জিও ব্যাগ ফেলছে।
জানা যায়, প্রায় ১৫ বছর আগেও ফাজিলেরঘাট-তালতলি সড়কটি ছিল কার্পেটিং সড়ক। ওই সড়কে চলত রিকশা, অটোরিকশা, ট্রলি ও অন্যান্য যানবাহন। স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীদের নির্বিঘ্ন যাতায়াতের একমাত্র ভরসা ছিল এই রাস্তাটি। ২০০৬ সাল থেকে ধীরে ধীরে শুরু হয় নদীভাঙন। এক যুগেরও বেশি সময় ধরে ভাঙতে ভাঙতে এখন আর সড়কের কোনো অস্তিত্ব অবশিষ্ট নেই। দীর্ঘদিনেও কোনো মেরামত বা পুনর্নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। স্থানীয়ভাবে পরিচিত 'জগতপুর-তালতলি সড়ক'টি এখন সম্পূর্ণ চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ায় কয়েক হাজার মানুষ পড়েছেন সীমাহীন দুর্ভোগে। কোথাও কোথাও ইটের কিছু চিহ্ন এখনো দেখা গেলেও, অধিকাংশ অংশই নদীর করালগ্রাসে বিলীন হয়ে গেছে।
পূর্ব জগতপুর গ্রামের ইদ্রিস মিয়ার ছেলে কৃষক রমজান আলী বলেন, আমরা দিনমজুর, দিনে এনে দিনে খাই। এখন ভিটেমাটি ছাড়া কিছুই নেই। বাবার দেওয়া ১২ শতক জা নদীতে চলে গেছে। সেই জমিতেই চাষ করে সংসার চলত। এখন শুধু ঘরে জন্য একটি ভিটা বাকি আছে। জোয়ার এলেই আতঙ্কে থাকি, কখন এটুন ঘরও নদীতে চলে যায়। জিও ব্যাগ ফেলে ঘরটা রক্ষা করার চেষ্টা করছি, কি যেভাবে ভাঙছে তাতে মনে হয় না ঘরটা থাকবে। এখনও কোনো সরকা সহায়তা পাইনি। আমাদের গ্রামের নজরুল ইসলাম ও আবুল কালাম ভাঙনে ভয়ে শহরে বাসা ভাড়া নিয়ে চলে গেছেন।
একই গ্রামের গৃহবধূ সালেহা বেগম বলেন, নদীর পাড়ে সন্তানদের আতঙ্কে দিন কাটছে। সবসময় ভিটে হারানোর ভয় মাথায় থাকে। জোয়ার। বৃষ্টি হলে আতঙ্ক দ্বিগুণ হয়ে যায়। আল্লাহ ছাড়া আমাদের রক্ষা করার আ কেউ নেই। বন্যায় জমিও চলে গেছে, এখন আর চাষাবাদ করার কিছু নেই শুধু ঘরের ভিটেমাটি ছাড়া আর কিছু অবশিষ্ট নেই। একটু বেশি পানি এলে সেটিও চলে যাবে।
ওই গ্রামের আরেক বাসিন্দা ওমর ফারুক বলেন, ২০০৬ সাল থেকে ভাঙন শুরু হয়। আমরা তালতলি বাজারে যাতায়াত করতাম এই সড়ক দিয়ে। জমির ধান কেটে এই রাস্তায় ঘরে আনতাম। এখন তো বাড়িতে এক বস্তা চাল আনতেও অনেক কষ্ট হয়। শহর থেকে মালামাল আনতে গিয়ে কী পরিমাণ দুর্ভোগ হয়, তা আমরা ছাড়া কেউ বুঝবে না।
স্থানীয়দের দাবি, অবিলম্বে নদীভাঙন রোধে কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়া হলে পুরো জগতপুর গ্রাম বিলীন হয়ে যাবে নদীতে। পাশাপাশি, ফাজিলেরঘাট-তালতলি সড়ক পুনঃনির্মাণ করে দ্রুত যোগাযোগব্যবস্থা সচল করারও জোর নিয়ে দাবি জানিয়েছেন তারা।
এ প্রসঙ্গে পানি উন্নয়ন বোর্ড ফেনীর নির্বাহী প্রকৌশলী আক্তার হোসেন বলেন, মুছাপুর রেগুলেটর পুনর্নির্মাণ হতে আরও কয়েকবছর সময় লাগবে, এখন যেসব ভাঙন দেখা দিয়েছে তা নিয়ন্ত্রণে বিশ্ব ব্যাংকের বরাদ্দের কয়েকেটি প্রকল্প এসেছে। সহসা দরপত্র আহবান করা হবে।
আপনার মতামত লিখুন :