মোহাম্মদ আখতার হোসেন গাজীপুর: গাজীপুরে সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিন হত্যাকাণ্ডের তদন্তে উন্মোচিত হয়েছে এক ভয়ংকর অপরাধ সাম্রাজ্যের মুখোশ। কুখ্যাত কোপা মিজান সিন্ডিকেট চাঁদাবাজি, জমি দখল, টেন্ডারবাজি, মাদক ব্যবসা আর ভাড়াটে খুনের মাধ্যমে নগরীতে গড়ে তুলেছিল এক ভয়াল ‘মৃত্যু সাম্রাজ্য’। এবার সেই সাম্রাজ্য ভাঙতে মাঠে নামল পুলিশ। পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন—এবার শুধু হত্যাকারীদের গ্রেফতার নয়, পুরো চক্র ধ্বংস করাই মূল লক্ষ্য। এজন্য সাদাপোশাকে বিশেষ অভিযান চলছে। নগরীর প্রতিটি এলাকায় নজরদারি, তালিকা তৈরি ও গোপন গোয়েন্দা তৎপরতা জোরদার করা হয়েছে।
পুলিশের বিশেষ কৌশল সাদাপোশাকে অভিযান:অপরাধীরা টের পাওয়ার আগেই ধরপাকড়,তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে স্থানীয় অভিযোগ, সাংবাদিকদের প্রতিবেদন ও পুরনো মামলার নথি খতিয়ে দেখে সিন্ডিকেট ভাঙতে ভেতর থেকেই চাপ সৃষ্টি করে কোপা মিজান সাম্রাজ্য ধ্বংসের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে পুলিশ। একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা স্পষ্টভাবে বলেন এখন শুধু হত্যাকারীদের ধরা নয়, পুরো অপরাধচক্র ধ্বংস করাই আমাদের লক্ষ্য। চাঁদাবাজি, দখলবাজি ও মাদকের সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।
কোপা মিজানের নিয়ন্ত্রণ: দীর্ঘদিন ধরে গাজীপুরে সাতটি কিলার গ্রুপ পরিচালনা করছে কোপা মিজান। টাকার বিনিময়ে খুন, কোটি কোটি টাকার চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা ও জমি দখলের মাধ্যমে গড়ে তোলে এক অন্ধকার সাম্রাজ্য। সাংবাদিক তুহিন হত্যার তদন্তে প্রথমবার প্রকাশ্যে আসে তার ভয়াবহ নিয়ন্ত্রণ। এবার তার পেছনে কোন রাজনীতির নেতাকর্মী আছে কিনা অনুসন্ধানে নেমেছে প্রতিদিনের কাগজে টিম। জনমতের প্রতিক্রিয়া: গাজীপুরবাসী মনে করছে—এই অভিযান সফল হলে শুধু আসাদুজ্জামান তুহিন হত্যার বিচার নয়, বরং শহরের দীর্ঘদিনের চাঁদাবাজ-দখলবাজ সাম্রাজ্যের পতন ঘটবে।
নাগরিক সমাজের দাবি“সাদাপোশাকে পুলিশের অভিযান যেন কোনো রাজনৈতিক চাপে থেমে না যায়। কমিশনারের সাফল্যে প্রশংসার ঝড়: ১৫ দিনে চার্জশিট—বাংলাদেশে বিরল ঘটনা, গাজীপুরে অপরাধ দমনে একের পর এক সাফল্যে আলোচনায় এসেছেন জিএমপি কমিশনার ডিআইজি ড. নাজমুল করিম খান। দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই তার কঠোর অবস্থান, দ্রুত পদক্ষেপ ও দৃঢ় নেতৃত্ব নতুন ইতিহাস গড়ছে। প্রতিদিনের কাগজ’র স্টাফ রিপোর্টার আসাদুজ্জামান তুহিন হত্যার ঘটনায় মাত্র ১৫ দিনে মধ্যেই আদালতে চার্জশিট দাখিল করে তিনি নজির স্থাপন করেছেন। ৭ আগস্ট হত্যার মাত্র তিন দিনের মধ্যেই সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ৯ আসামিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে কুখ্যাত কোপা মিজানসহ ৮ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়। নগরবাসীর বলছে এটি “বাংলাদেশে বিরল ঘটনা”, যা ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।
মানবিক কমিশনার: আইনশৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি মানবিকতারও দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন ড. নাজমুল। নিহত সাংবাদিক তুহিনের পরিবারকে নগদ সহায়তা দেন এবং সর্বদা পাশে থাকার আশ্বাস দেন। তিনি বলেন“সাংবাদিক তুহিন হত্যাকাণ্ড আমাদের ব্যথিত করেছে। হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করবো। তার পরিবারের পাশে দাঁড়ানো আমাদের মানবিক দায়িত্ব।”
অপরাধ দমনে আরও সাফল্য: গাছা থানার অভিযানে গ্রেফতার ৬ ডাকাত, উদ্ধার নগদ অর্থ, অস্ত্র ও মোটরসাইকেল, ট্রাভেল ব্যাগে আট টুকরো লাশের রহস্য উন্মোচন,আলোচিত হানিট্র্যাপ মামলার আসামিদের দ্রুত গ্রেফতার ও আইনি ব্যবস্থা এবং সিটির বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রচুরসংখ্যক ছিনতাইকারীকে আটক করে কারাগারে পাঠানো। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রশংসার ঝড়: ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান লিখেছেন—এমন সাহসী অফিসার থাকলে অপরাধীদের দাপট আর থাকবে না।
গাজীপুরের সিনিয়র সাংবাদিক টুটুল বলেন: তুহিন ভাই হত্যার চার্জশিট ১৫ দিনে এটা বাংলাদেশের ইতিহাসে বিরল। স্যালুট কমিশনারকে। গৃহিণী রুবিনা আক্তার,অভিযোগ দেয়ার সাথে সাথে ব্যবস্থা নিয়েছে পুলিশ। আগে কখনো এত দ্রুত সেবা পাইনি। এ বিষয়ে পুলিশ কমিশনার ড. নাজমুল করিম খান প্রতিদিনের কাগজ কে বলেন—“পুলিশকে কাজ করতে দিন। আমরা দুর্বল অবস্থায় আছি, তবুও কাজ করবো। জনগণ সহযোগিতা করলে গাজীপুরের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে আমরা পাশে ছিলাম, আছি, ইনশাআল্লাহ থাকবো।” আসাদুজ্জামান তুহিন হত্যার বিচার যেমন দ্রুত হচ্ছে, তেমনি ভয়ংকর ‘কোপা সাম্রাজ্য’ ভাঙার যুদ্ধও শুরু হয়েছে জোরেশোরে। গাজীপুরবাসী বিশ্বাস করছে এবার হয়তো সত্যিই পরিবর্তনের সময় এসেছে।
আপনার মতামত লিখুন :