Noman Group Advertisement

ওসি প্রদীপের হাতে নির্যাতিত সাংবাদিক ফরিদের আহাজারি শুনছে না কেউ

নিজস্ব সংবাদদাতা , প্রতিদিনের কাগজ

প্রকাশিত: ২৯ আগস্ট, ২০২৫, ০৪:৪৪ পিএম

বহুল আলোচিত মেজর সিনহা হত্যা মামলার ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি বহিষ্কৃত ওসি প্রদীপ কুমার দাসের হাতে নির্যাতিত সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফা খানের আহাজারি শুনছে না কেউ। প্রায় ছয় বছর আগে প্রদীপ গংয়ের সাজানো ৬টি মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার হয়ে তিনি টানা ১১ মাস ৫ দিন কারাভোগের পর জামিনে মুক্তি পান। সেই থেকে আজ অবধি মামলাগুলো ঝুলে আছে, কোন সরকারই প্রত্যাহার করেনি।

সাংবাদিক ফরিদ বারবার প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয়, পুলিশ সদর দপ্তর, কক্সবাজারের ডিসি-এসপি থেকে শুরু করে হাইকোর্ট পর্যন্ত আবেদন করেও কোনো প্রতিকার পাননি। মামলা খরচ চালাতে চালাতে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন তিনি, পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন এবং রয়েছেন চরম নিরাপত্তাহীনতায়। ওসি প্রদীপ ও তার ঘনিষ্ঠদের বিরুদ্ধে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশের কারণে সাংবাদিক ফরিদ রোষানলে পড়েছিলেন।

তার অভিযোগ, ২০১৯ সালে কক্সবাজারের তৎকালীন পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন সিন্ডিকেট ও প্রদীপের মাদক কারবারের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন করার অপরাধে তাকে ঢাকার বাসা থেকে তুলে নিয়ে টেকনাফে অমানবিক নির্যাতন চালানো হয়। এরপর তার বিরুদ্ধে অস্ত্র, মাদক ও চাঁদাবাজির সাজানো ছয়টি মামলা দিয়ে চালান দেওয়া হয় আদালতে।

এসব মামলার বিচার আজও শেষ হয়নি, বরং রহস্যজনকভাবে চার্জ গঠন করা হয়েছে। আদালতের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ছয় বছর ধরে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়নি, বারবার সময় নিয়ে সময় ক্ষেপণ করছে। একই সঙ্গে ফরিদের স্ত্রীর দায়ের করা রিটও নিষ্পত্তি হয়নি, যেখানে হাইকোর্ট স্বরাষ্ট্র সচিবসহ বিবাদীদের প্রতি রুল জারি করেছিল কেন ফরিদুল মোস্তফাকে নিরাপত্তা দেওয়া হবে না। শুধু তাই নয়, জামিনে মুক্ত হওয়ার পর ফরিদের পুরোনো ডিজিটাল পাসপোর্ট নবায়নের আবেদনও আটকে দেওয়া হয় পুলিশ ক্লিয়ারেন্সের অজুহাতে, যদিও ডিজিটাল পাসপোর্ট নবায়নে পুলিশের রিপোর্ট প্রয়োজন নেই। এতে তার বিদেশ যাওয়ার সুযোগও বন্ধ হয়ে গেছে।

তিনি অভিযোগ করেছেন, ষড়যন্ত্রকারীদের কারণে টানা পাঁচ বছর ধরে পাসপোর্ট হাতে পাচ্ছেন না। গত ছয় বছরে বনেক, বিএমএসএফসহ বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠন ফরিদের মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং নিরাপত্তা নিশ্চিতে সরকারের কাছে বহুবার আবেদন জানিয়েছে। মানববন্ধন, বিক্ষোভ ও স্মারকলিপি দেওয়া হলেও কোনো ফল মেলেনি। কক্সবাজারের সাবেক জেলা ও দায়রা জজ মো. ইসমাইল বিদায় অনুষ্ঠানে প্রকাশ্যে ফরিদের ওপর ঘটে যাওয়া নির্যাতনের কথা স্বীকার করে সহমর্মিতা প্রকাশ করেছিলেন, কিন্তু বাস্তবে কোনো পরিবর্তন আসেনি।

সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফা অভিযোগ করেছেন, এই মামলাগুলোর কারণে প্রতি মাসে তাকে কক্সবাজার আদালতে হাজিরা দিতে হয়, এতে তার পেশাগত জীবন ও পরিবার দুটোই ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। দুই যুগ ধরে তিনি বাংলাদেশ বেতার ও বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকসহ স্থানীয় পত্রিকায় কাজ করছেন। বর্তমানে তিনি দৈনিক কক্সবাজারবাণীর সম্পাদক ও প্রকাশক হলেও মিথ্যা মামলার বোঝায় পেশাগত জীবন থমকে গেছে। তার পরিবার আর্থিক ও মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে।

ফরিদ বলছেন, “আমি আর পারছি না। মামলার বোঝা অসহনীয় হয়ে উঠেছে। আমরা সর্বশান্ত হয়ে গেছি। শুধু ন্যায়বিচার চাই।” সাংবাদিক সংগঠন, মানবাধিকার সংগঠন ও সচেতন মহল বলছে, এভাবে একজন পেশাদার সাংবাদিকের বিরুদ্ধে সাজানো মামলা ঝুলিয়ে রাখা আদালতের সময় নষ্ট করছে, একই সঙ্গে গণমাধ্যমের কণ্ঠ রোধের অপচেষ্টা চলছে। নির্যাতিত সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফা আবারও প্রধান উপদেষ্টা, স্বরাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয়, পুলিশ সদর দপ্তর, পাসপোর্ট অধিদপ্তর, আদালত ও মানবাধিকার সংগঠনের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

Link copied!