গাজীপুরের আলোচিত সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিন হত্যার নৃশংসতার চিত্রে কেঁপে উঠেছে পুরো নগরী। মানবিকতার শেষ সীমা লঙ্ঘন করে বর্বরোচিতভাবে হত্যা করা হয় এ তরুণ সাংবাদিককে। তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, হত্যার শেষ মুহূর্তে খুনিদের কাছে পানি চেয়েছিলেন সাংবাদিক তুহিন। কিন্তু সামান্য সেই মানবিক চাওয়াটুকুও পূরণ হয়নি। বরং পানি চাইবার অপরাধেই খুনিরা আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। মূল হোতা কুখ্যাত কোপা মিজান ধারালো অস্ত্র দিয়ে তুহিনের শরীরে আরও আঘাত হানেন। মৃত্যুর আর্তচিৎকার থেমে গেলে রক্তাক্ত দেহটিকে ফেলে রেখে পালিয়ে যায় মিজান ও তার স্ত্রী গোলাপি নেতৃত্বাধীন সিন্ডিকেট।
তুহিনের স্ত্রী মুক্তা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার স্বামী মৃত্যুর আগে এক গ্লাস পানি চেয়েছিল। কিন্তু এতটুকু দয়া হয়নি খুনিদের মনে। যারা মানুষ হয়েও একজন মরনাপন্ন মানুষকে পানি দেয়নি, তারা আসলে পশুর চেয়েও হিংস্র।
তুহিনের ছোট ছেলে-বাবার মৃত্যু মেনে নিতে পারছে না। প্রতিদিন বাবার ছবির সামনে দাঁড়িয়ে সে শুধু একটি কথাই বলছে—আমার বাবা কই? তিনি কেন আসেন না?
স্থানীয়রা বলছেন, বহু বছর ধরে কোপা মিজান ও তার স্ত্রী গোলাপির নেতৃত্বে গড়ে ওঠা এই সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেট এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল। জমি দখল, মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি থেকে শুরু করে নানা অপরাধ তাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। সাহসী সাংবাদিক তুহিন সেই অন্ধকার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কলম ধরেছিলেন। আর এর ফলেই তাঁকে পরিকল্পিতভাবে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।
কোনাবাড়ীর এক প্রবীণ সমাজসেবক বলেন, আমরা শুনেছি, মৃত্যুর আগে তুহিন শুধু এক গ্লাস পানি চেয়েছিলেন। কিন্তু তাকে পানি তো দেওয়া হয়নি, বরং আরও কোপানো হয়েছে। এ ঘটনা আমাদের বিবেককে নাড়া দিয়েছে। খুনিদের ফাঁসি না হলে এ সমাজে কোনো মা-বাবা, কোনো স্ত্রী নিরাপদ থাকবে না।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএমপি) কমিশনার ডিআইজি ড. নাজমুল করিম খান জানিয়েছেন,এটি ছিল একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। মূল হোতা কোপা মিজান ও তার স্ত্রী গোলাপি সিন্ডিকেটকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। আমরা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই চার্জশিট আদালতে দাখিল করেছি। তুহিন হত্যার বিচার যেন দ্রুত সম্পন্ন হয়, সে ব্যাপারে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে।
তুহিন হত্যাকাণ্ড এখন আর শুধু একটি পরিবার বা একটি সাংবাদিক সমাজের ক্ষোভ নয়; এটি মানবতার বিরুদ্ধে এক ভয়াবহ অপরাধ হিসেবে দেখছে সাধারণ মানুষ। শহরের অলিগলিতে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে একটাই স্লোগান—“তুহিনের রক্ত বৃথা যাবে না, খুনিদের বিচার হবেই।”
উল্লেখ্য, গত ৭ আগস্ট গাজীপুর মহানগরের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হয় সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনকে। সোমবার (২৫ আগস্ট) এ ঘটনায় ৮ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেছে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএমপি)।
আপনার মতামত লিখুন :