কক্সবাজারের উখিয়ায় বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত এলাকা থেকে ২ লাখ ৮০ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। বিজিবির দাবি, উদ্ধার হওয়া এই বিপুল পরিমাণ ইয়াবার বাজারমূল্য প্রায় ৮৪ কোটি টাকা। মাদকের এ চালানটি মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করছিল একটি সংঘবদ্ধ চোরাকারবারি চক্র।
বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সংবাদ মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করেন উখিয়া ব্যাটালিয়ন (৬৪ বিজিবি)-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন।
বিজিবি জানায়, মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) রাত ৮টার দিকে উখিয়ার বালুখালী বিওপি (বর্ডার আউট পোস্ট)-এর একটি বিশেষ টহলদল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সীমান্ত এলাকায় অবস্থান নেয়। প্রায় দেড় ঘণ্টা পর রাত সাড়ে ৯টার দিকে বিজিবি সদস্যরা লক্ষ্য করেন, মিয়ানমারের দিক থেকে ১০-১২ জনের একটি দল বাংলাদেশ সীমান্ত অতিক্রম করে ভেতরে প্রবেশ করছে। তাদের গতিবিধি সন্দেহজনক হওয়ায় বিজিবি সদস্যরা চ্যালেঞ্জ করলে তারা পালানোর চেষ্টা করে।
চোরাকারবারিদের মধ্যে ৬-৭ জনকে বিজিবি সদস্যরা চিহ্নিত করতে সক্ষম হন। তারা দেশীয় অস্ত্র ও লাঠিসোঁটা উঁচিয়ে বিজিবিকে ভয়ভীতি দেখিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করে। বিজিবি সদস্যরা সাহসিকতার সঙ্গে প্রতিরোধ গড়ে তুললে চোরাকারবারিরা পাশের একটি খালে ঝাঁপ দিয়ে সাঁতরে আবার মিয়ানমার সীমান্তের দিকে পালিয়ে যায়।
ঘটনার পরপরই বিজিবি সদস্যরা খালের পাড় এলাকায় তল্লাশি চালিয়ে বিশেষভাবে মোড়ানো অবস্থায় ২ লাখ ৮০ হাজার পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, এসব ইয়াবা মিয়ানমার থেকে পাচারের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে আনা হচ্ছিল।
বিজিবির পক্ষ থেকে জানানো হয়, চিহ্নিত চোরাকারবারিদের আটকের জন্য রাতেই সীমান্ত এলাকায় ব্যাপক অভিযান চালানো হয়। পরদিন সকালেও অভিযান পরিচালনা করা হয়। তবে এখনও পর্যন্ত কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি।
অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন বলেন, বিজিবি শুধু সীমান্ত পাহারায় নয়, মাদক ও চোরাচালান প্রতিরোধেও সর্বদা কঠোর অবস্থানে রয়েছে। মাদক পাচারের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে। সীমান্তে আইনশৃঙ্খলা ও জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষায় আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আরো জানান মিয়ানমার সীমান্ত এখন মাদক পাচারের বড় হটস্পট।
বিশ্লেষকদের মতে, দীর্ঘদিন ধরেই টেকনাফ ও উখিয়াসহ কক্সবাজার জেলার সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলো মাদক পাচারের প্রধান রুট হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। বিশেষ করে মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশের চক্রগুলো বাংলাদেশে ইয়াবা পাচারের অন্যতম উৎস। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে মাঝেমধ্যে বড় চালান ধরা পড়লেও সীমান্তবর্তী এলাকার দুর্গম ভূপ্রকৃতি ও সীমান্তের নিরাপত্তা দুর্বলতার কারণে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না।
গত কয়েক বছরে বিজিবির অভিযান ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় লক্ষ লক্ষ ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়েছে। তবে মাদক পাচার বন্ধে দুই দেশের যৌথ উদ্যোগ ও কূটনৈতিক চাপ প্রয়োগের তাগিদ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
আপনার মতামত লিখুন :