বিশেষ প্রতিনিধি: দীর্ঘদিন ধরেই দেশের গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো প্রকল্পে হাজার হাজার টাকা লুটপাটের কেন্দ্রবিন্দু। সরকারি হিসাব এবং অভ্যন্তরীণ সূত্রগুলো বলছে, গত এক দশকে অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রমাণ মিলেছে অর্ধশতাধিক প্রকল্পে। তবে গণপূর্ত অধিদপ্তর প্রশাসন ও নীতিনির্ধারকের পরিবর্তন সত্ত্বেও, প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের কারণে মূল দায়ী কর্মকর্তারা এখনও বহাল তবিয়তে রয়েছেন। গণপূর্ত অধিদপ্তরের ভেতরে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। এদের নেতৃত্বে রয়েছেন সেই কর্মকর্তারা, যারা স্বৈরাচারী আমলে পদোন্নতি লাভ করেছেন এবং রাজনীতিবিদদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের মাধ্যমে দপ্তরের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত প্রভাবিত করেছেন। সিন্ডিকেটটি শুধুমাত্র প্রকল্প বরাদ্দ ও টেন্ডার কারচুপিই নিয়ন্ত্রণ করে না, বরং কর্মী নিয়োগ, বদলি এবং প্রশাসনিক সিদ্ধান্তেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। অভ্যন্তরীণ সূত্র বলছে, এরা এমন ক্ষমতাশালী যে, দপ্তরের ভেতরে তাদের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না। ঢাকার বিজ্ঞ সিএমএম আদালতে সিআর মামলা নং-১১৮/২০২৫ দায়ের করা হয়েছে। মামলা ধারা: ১৪৭/১৪৮/৩২৬/৩০৭/৫০৬/৩৪।
এই মামলার আসামিরা হলো : তৈমুর আলম, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী, ই/এম সার্কেল-৪, মোয়াজ্জেম হোসেন, সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী শেরেবাংলা নগর-১, এ.এন. মাজাহারুল ইসলাম, সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী প্রকল্প-৫, মো. মিজানুর রহমান, সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী, প্লাম্বিং ইউনিট-২, ঢাকা, মোর্শেদ ইকবাল, সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী, মো. আবুল খায়ের, সাবেক অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী, রংপুর জোন, মো. জাহাঙ্গীর আলম, সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী, মো. সোলায়মান হোসেন, সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী, ই/এম বিভাগ-১১, আব্দুল হালিম, সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী, ই/এম বিভাগ-১১, শরীফ মো. আব্দুল্লাহ আল মাসুম, সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী, ই/এম বিভাগ-১১ মোসলেহ উদ্দিন, সাবেক অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী, আবুল কালাম আজাদ, গণপূর্ত কর্মকর্তা, বিভাগ-৩, মো. মেহেদী হাসান, সাবেক মহাখালী গণপূর্ত বিভাগ-৩, মো. এনামুল হক এনাম, উচ্চমান সহকারী/বড়বাবু, ১১তলা, পবিত্র কুমার দাস, গণপূর্ত অধিদপ্তর, মো. ইউসুফ, গণপূর্ত ইএম কারখানা বিভাগের আওয়ামী লীগ নেতা, আজমল হক মনু, সাবেক উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী, ঢাকা উপ-বিভাগ-১,মো. শামসুল ইসলাম, সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী, বিভাগ-৪, সতীনাথ বসাক, সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী, সার্কেল-২, মো. মনিরুজ্জামান, সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী, মো. শহিদুল আলম, সাবেক অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী. মো. ইলিয়াছ আহমেদ, সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী, আজিমপুর বিভাগ, মো. ফজলুল হক, সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী, রাজশাহী সার্কেল, উৎপল কুমার দে, সাবেক অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী, বরিশাল জোন, শেখর চন্দ্র বিশ্বাস, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী, মোরশেদ ইকবাল, সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী, শামসুদ্দোহা, সাবেক অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী, ঢাকা জোন
অভিযোগ রয়েছে, টেন্ডার কারচুপি, প্রকল্পের অতিরিক্ত ব্যয় এবং হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করার মাধ্যমে গণপূর্ত অধিদপ্তরের মূল দায়িত্বের অপব্যবহার। তবে, মামলাগুলো ধীরগতির কারণে কার্যকর হয়নি। অনেক ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রভাব ও প্রশাসনিক অস্পষ্টতার কারণে অভিযোগগুলো এখনো ঝুলে রয়েছে। মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ: সাবেক অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী, ঢাকা জোন। মিরপুর, আজিমপুর ও মতিঝিলের ফ্ল্যাট প্রকল্পের কোটি কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগে জড়িত। প্রধান প্রকৌশলী পদে বসানোর জন্য প্রভাবশালী চক্র তদবির চালাচ্ছে। মো. সোলায়মান হোসেন, আব্দুল হালিম, আজমল হক মনু, মো. শামসুল ইসলাম: সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী ও উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী। দপ্তরের সিদ্ধান্ত গ্রহণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। মো. জাহাঙ্গীর আলম, তৈমুর আলম, মো. মিজানুর রহমান: সাবেক নির্বাহী ও তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী। টেন্ডার বরাদ্দ ও প্রকল্প পরিচালনায় প্রভাব বিস্তার। এদের কার্যক্রমের মূল উদ্দেশ্য ছিল ব্যক্তিগত অর্থ উপার্জন এবং সিন্ডিকেটের ক্ষমতা বৃদ্ধি। গণপূর্ত অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা জানান, বর্তমানে দপ্তরের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে বসবাসরত এই সিন্ডিকেটের কারণে প্রশাসনিক সংস্কার কার্যকর করা কঠিন। এদের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক পৃষ্ঠপোষকতা রয়েছে, যা যেকোনো বদলির আদেশ প্রতিহত করতে সক্ষম। প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ শামীম আখতারকে একাধিকবার ফোন দিয়ে মন্তব্য চাইলে তিনি রিসিভ করেননি। অন্যদিকে, অভ্যন্তরীণ সূত্রের মতে, দপ্তরের ভেতরে সংস্কারের চেষ্টা করার মতো সাহসী কর্মকর্তারা নানা প্রভাবের কারণে সরাসরি পদক্ষেপ নিতে পারছে না। প্রকল্প বরাদ্দে প্রভাব বিস্তার করে, নির্বাচিত ঠিকাদারদের মাধ্যমে অনিয়ম। প্রকল্পের গুণগত মান হ্রাস করে, অতিরিক্ত ব্যয় প্রদর্শন।
অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা প্রভাবশালী বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে উচ্চপদে নিয়োগ নিয়ে ক্ষমতা বজায় রাখে। এই কৌশলগুলো নিশ্চিত করেছে, যে সরকারি প্রকল্পে কোটি কোটি টাকা লুটপাট হলেও সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া যায়নি। গণপূর্ত অধিদপ্তরে এখনও প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের অস্তিত্ব দেশটির অবকাঠামো প্রকল্পের ন্যায্যতা ও জবাবদিহির পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজনৈতিক আশ্রয় ও প্রশাসনিক প্রভাবের কারণে দপ্তরের সংস্কার কার্যক্রম এখনো কার্যকর হয়নি। সতর্ক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, যদি প্রভাবশালী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হয়, তবে সরকারি প্রকল্পগুলোতে অনিয়ম ও দুর্নীতির ধারা চলতেই থাকবে। জনগণের করের টাকা সুষ্ঠুভাবে ব্যবহারের জন্য দপ্তরের তৎপর সংস্কার, স্বচ্ছতা ও প্রশাসনিক জবাবদিহি অপরিহার্য।
আপনার মতামত লিখুন :