মেঘনা নদীতে বালু উত্তোলনের মহা উৎসব- হুমকির মুখে আশুগঞ্জ আন্তর্জাতিক নদী বন্দর ও তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র

রেজাউল করিম রেজা , বিশেষ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ১২:৪৫ পিএম

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে মেঘনা নদী থেকে বেপরোয়া বালু উত্তোলনের কারণে ভয়াবহ নদী ভাঙন এবং মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এতে আশুগঞ্জ আন্তর্জাতিক নৌবন্দর এলাকা, বিদ্যুৎকেন্দ্র ও তীরবর্তী এলাকা ভয়াবহ ভাঙনের মুখে পড়েছে। স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, আশুগঞ্জ বন্দর এলাকা ও বিদ্যুৎকেন্দ্রের নিকটবর্তী মেঘনা নদীতে দিনরাত ড্রেজার বসিয়ে অনুমোদন ছাড়াই বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এর ফলে নদীর তলদেশ ও তীর একসাথে ধ্বসে পড়ছে, যা যেকোনো সময় ভয়াবহ বিপর্যয় সংঘটিত হতে পারে।

জানা গেছে, ঢাকা-সিলেট করিডোর মহাসড়কের বালুর চাহিদার কারণে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হিগো মীর আক্তার এর প্রতিনিধি ‘এ-২ বি কর্পোরেশন’-কে তিন মাসের জন্য মেঘনা নদীর বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাছের এলাকা থেকে বালু উত্তোলনের অনুমতি দেয় জেলা প্রশাসন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে লাল নিশানা দিয়ে সীমানাও নির্ধারণ করা হয়েছিল। তবে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, বালু উত্তোলনকারীরা লাল নিশানা উড়িয়ে ড্রেজার বসিয়ে নদীর পাড়ে পর্যন্ত বালু উত্তোলন করছে। এতে আশুগঞ্জ বন্দর, কৃষিজমি ও বসতভিটাসহ তীরবর্তী এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। চরসোনারামপুর গ্রামে প্রায় ছয় হাজার মানুষ বসবাস করছে।

নদীর তীরবর্তী এ এলাকায় রয়েছে দেশের গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো—২৩০ কেভি বিদ্যুতের রিভার ক্রসিং টাওয়ার। বালু উত্তোলনের কারণে টাওয়ারের নিচের মাটি সরছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই অবস্থা চলতে থাকলে জাতীয় গ্রিডও হুমকির মুখে পড়তে পারে। স্থানীয় সামাজিক সংগঠনগুলো বলছে, এভাবে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন অব্যাহত থাকলে আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেড ও আশুগঞ্জ শিল্পাঞ্চল মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হবে।

ইতোমধ্যেই চরাঞ্চলের ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, ২০২২ সালে তৎকালীন ইউএনও ও জেলা প্রশাসকের প্রতিবেদনেও আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছিল, চরসোনারামপুর ও আশপাশের এলাকায় বালু উত্তোলন চললে বিদ্যুৎকেন্দ্র, বন্দর এলাকা, বসতঘর ও কৃষিজমি নদী ভাঙনের শিকার হবে। তারপরও সম্প্রতি তিন মাসের অনুমতি দেওয়ায় স্থানীয়দের মধ্যে উদ্বেগ ও ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। এতে করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দিদারুল আলম  এমন অনুমতি দেওয়ায় নিন্দা জানিয়েছেন স্থানীয়বাসী।

"বালু উত্তোলনে হিড়িক দৈনিক- ব্রাক্ষণবাড়ীয়া জেলা প্রশাসকের মাসিক আয় কোটি টাকা" শিরোনামে - প্রতিদিনের কাগজ পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পর চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। এমনটাই নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয় থেকে। আশুগঞ্জ জেনারেল মার্চেন্ট অ্যান্ড কমিশন অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. জহিরুল ইসলাম জারু মিয়া বলেন, “এ অবস্থা চলতে থাকলে তীরবর্তী এলাকা ও আশুগঞ্জ বন্দর ভয়াবহ ভাঙনের মুখে পড়বে। আমরা ইজারা বাতিলের জন্য মহামান্য হাইকোর্টে আবেদন করেছি, মহামান্য হাইকোর্ট বালু উত্তোলন বন্ধ করতে জেলা প্রশাসককে আদেশ দিয়েছেন। কিন্তু জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দিদারুল আলম হাইকোর্টের রায়কে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে বালু উত্তোলন চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করেছেন। আশুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাফে মোহাম্মদ ছড়া প্রতিদিনের কাগজ কে বলেন, “মহাসড়কের ফোরলেন প্রকল্পের জন্য বালুর চাহিদা থাকায় তিন মাসের জন্য অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

সীমানা অতিক্রম বা চুক্তি ভঙ্গ হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অন্যদিকে, মীর আক্তারের প্রতিনিধি কামাল আহমেদ জয় দাবি করেছেন, তারা ইজারার শর্ত মেনে বালু উত্তোলন করছেন, তবে ভৈরবের কিছু প্রভাবশালী মহল অবৈধভাবে ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন করছে। স্থানীয়রা আশঙ্কা করছেন, সরকারি প্রতিবেদন ও সতর্কবার্তা উপেক্ষা করে বালু উত্তোলন অব্যাহত থাকলে আশুগঞ্জে বিদ্যুৎকেন্দ্র, মহাসড়ক, শিল্পাঞ্চল ও হাজারো মানুষের বসতি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে, যা দেশের অর্থনীতিতেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। পাশাপাশি ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয়ের সম্মুক্ষীন হবে আশুগঞ্জ বন্দর নগরী।

আশুগন্জে মেঘনা নদীতে এভাবে বালু উত্তোলনের এই অবৈধ প্রত্রিয়ায় জেলা প্রশাসকের সাথে সরাসরি জড়িয়ে পরেছেন আশুগন্জ বিএনপির সভাপতি শাহজাহান সিরাজ। বিএনপি'র উপজেলা সভাপতি শাহজাহান সিরাজের এই দখল ও চাঁদাবাজি এবং অবৈধ বালু উত্তোলনের কারণে আশুগন্জ উপজেলায় বিএনপি'র সুনাম মারাত্বকভাবে ক্ষুন্ন হচ্ছে এবং জনমনে বিএনপি'র বিষয়ে মারাত্মক নেতিবাচক মনোভাব তৈরি হচ্ছে। ইতিপূর্বে এভাবে স্থানীয় জনমতকে বৃদ্ধাংগুলি দেখিয়ে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন করে গণআক্রোশের শিকার হয়ে গতবছরের ৫ আগষ্ট চাঁদপুরের বহুল আলোচিত আওয়ামীলীগের সাবেক মন্ত্রী দীপুমনির ডানহাত হিসাবে পরিচিত ক্ষমতাধর সেলিম চেয়ারম্যান ও তার ছেলে গণপিটুনিতে নিহত হয়।

Link copied!