গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৪১ জন সরকারী কর্মচারী গণবদলির আবেদন করেছেন৷ গত ২৭ আগস্ট পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক বরাবর তারা বদলির আবেদন জমা দিয়েছেন। নির্বাহী প্রকৌশলী হাফিজুল হকের বিরুদ্ধে সীমাহীন দুর্নীতি, কাজ সম্পন্ন না করেই বিল প্রদানসহ বন্যার সময় দায়সারা তড়িঘড়ি করে কাজ করতে গিয়ে তিন শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনা।
যমুনার ভাঙন থেকে গাইবান্ধা জেলার গোঘাট খানাবাড়ী রক্ষা শীর্ষক প্রকল্পের শ্রীপুর-২ প্যাকেজের আওতায় প্রায় ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ২৫০ মিটার নদীতীর সংরক্ষণের কাজ শুরু হয় ২০২৩ সালের অক্টোবরে। চলতি বছরের জুনে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও এখনো অন্তত ২০ হাজার ব্লক ফেলার কাজ শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু পুরো কাজ শেষ হয়েছে বলে জুনেই ঠিকাদার শাহারিয়ার আহমেদকে বিল পরিশোধ করেন গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী হাফিজুল হক।
দুর্নীতি দমন কমিশন দুদকের চেয়ারম্যান বরাবরে রেজাউল করিম রেজা একটি অভিযোগ দাখিল করেছেন। উক্ত অভিযোগে শত শত কোটি টাকা দুর্নীতির তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।
চূড়ান্ত বিল পরিশোধের পর কাজটি শেষ করতে পানি উন্নয়ন বোর্ড ঠিকাদারকে তাগিদ দিলে তড়িঘড়ি করে ব্লক ফেলার কাজ শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু উজান থেকে নেমে আসা ঢলে যমুনা-ব্রহ্মপুত্র তখন উত্তাল। উত্তাল ঢেউ আর স্রোত উপেক্ষা করে ভারী ভারী ব্লক যমুনায় ফেলতে গিয়ে ঘটে নৌকাডুবির ঘটনা।
গত ২৭ জুলাই গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের শ্রীপুরে বাবুর বাজার এলাকায় ব্রহ্মপুত্র নদের তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের কাজে নৌকায় করে ব্লক ফেলার সময় মাঝিসহ ৩০ শ্রমিক নৌকা ডুবে নিখোঁজ হন। তাদের মধ্যে ২৭ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। এ সময় আহতাবস্থায় বেশ কয়েকজনকে গাইবান্ধা জেলা সদর হাসপাতালেও ভর্তি করা হয়। ওই ঘটনায় মৃত্যু হয় আতোয়ার (৩৬), রাজু (৪৫) ও রশিদের (৪০)।
নির্বাহী প্রকৌশলী হাফিজুল হকের সীমাহীন দুর্নীতির বিষয়টি গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক অবগত হলে পানিসম্পদ সচিবের নিকট বাপাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী হাফিজুল হকের বিরুদ্ধে গত ৫ জুলাই একটি অভিযোগপত্র প্রেরণ করেন। উক্ত অভিযোগপত্রে প্রকৌশলী হাফিজুল হকের বিরুদ্ধে সমন্বয়হীনতাসহ দুর্নীতির অভিযোগ করেন, যার স্মারক নম্বর ০৫.৫৫.৩২০০.০০০.৯৯.১৪৫.১৭.৫০০।
প্রকৌশলী হাফিজুল হকের দুর্নীতিতে অতিষ্ঠ হয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৪১ জন কর্মচারী গত ২৭ আগস্ট বাপাউবোর মহাপরিচালক বরাবর একযোগে বদলি চেয়ে একটি আবেদন করেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মচারী জানান, হাফিজুল হকের দুর্নীতির কারণে তারা প্রশ্নবিদ্ধ হতে চান না। তার সীমাহীন দুর্নীতি ও দলীয় ঠিকাদারের সাথে ঘুষ বাণিজ্যে তারা অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন। এর দায়ভার তারা নিতে চান না। সে কারণে গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে তারা একযোগে বদলি চান।
আপনার মতামত লিখুন :