মিরসরাইয়ে বিদ্যালয়ের তহবিল থেকে ৩৬ লাখ টাকা আত্মসাৎ, পাঁচ দিনের মধ্যে ফেরতের নোটিশ

নিউজ ডেস্ক , প্রতিদিনের কাগজ

প্রকাশিত: ২৯ অক্টোবর, ২০২৫, ০৭:১০ পিএম

ছবি- (কোলাজ) প্রতিদিনের কাগজ

নুর হোসেন মিয়া, মিরসরাই: চট্টগ্রামের মিরসরাই বালিকা বিদ্যালয়ের সাময়িক বরখাস্ত প্রধান শিক্ষক আজিম উদ্দিন ভুইয়ার বিরুদ্ধে বিদ্যালয় তহবিল থেকে সাড়ে ৩৬ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এই অর্থ পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে বিদ্যালয়ের ব্যাংক হিসাবে জমা দেয়ার জন্যে নোটিশ করেছে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি। গত ২৫ অক্টোবর এই নোটিশ করা হয়।

আজিম উদ্দিন ভুইয়া মিরসরাই বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে দীর্ঘ এক যুগ প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এই সময়ে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন গুরুতর অভিযোগ ওঠে। অভিযোগের মধ্য রয়েছে স্কুল ছাত্রী ও নারী সহকর্মীদের উত্ত্যক্ত করা। নারী অভিভাবকদের সাথে কুরুচিপূর্ণ ও অশালীন আচরণ। ছাত্রীদের সাথে ভিডিও কলে অনৈতিক কাজ, পারিবারিক ব্যক্তিগত মুহুর্ত ভিডিও ধারণ করে অন্য ছাত্রীদের দেখানো, স্কুল ছাত্রীদের শরীরে অনৈতিক স্পর্শসহ চারিত্রিক শঙ্খলন ও আর্থিক কেলেঙ্কারি।

বিদ্যালয়ের সংস্কার, লাইব্রেরি স্থাপন, মুজিব কর্ণার স্থাপন, বিজ্ঞানাগার স্থাপন, লাইব্রেরির জন্য বই কেনা, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ক্রয়, স্টেশনারি ক্রয়, আসবাবপত্র ক্রয়, দেয়াল ও বাউন্ডারি নির্মাণসহ বিভিন্ন উন্নয়ন খাতে এবং বিভিন্ন নিয়োগের ক্ষেত্রে ভুয়া রশিদ ও ভাউচার সংযুক্ত করে আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগও উঠেছে। এসব অনৈতিক কাজ ও দুর্নীতি থেকে নিজেকে নিরাপদ রাখতে রাজনৈতিক আশ্রয়ও নেন তিনি।

তার এসব অনিয়ম দুর্নীতির বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকরা ফুঁসে উঠলে মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, শিক্ষা অফিস ও পরিচালনা কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

প্রধান শিক্ষক আজিম উদ্দিন ভুইয়ার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ তদন্ত করতে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড ও মিরসরাই উপজেলা প্রশাসন ৪ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি করে। তদন্ত কমিটির দীর্ঘ তদন্তে আজিম উদ্দিন ভুইয়ার বিরুদ্ধে আনীত অনৈতিক কাজের অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হয়।

তদন্ত কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন বর্তমানে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান প্রফেসর ইলিয়াস উদ্দিন আহমেদের জিম্মায় রয়েছে। চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের ১৩ সদস্য বিশিষ্ট আফিল এন্ড আরবিট্রি কমিটির সভা গত ৮ মাসেও অনুষ্ঠিত না হওয়ায় তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী আজিম উদ্দিন ভুইয়ার বিরুদ্ধে স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেনি বোর্ড।

অস্থায়ী বহিষ্কারাদেশ বহাল অবস্থায় আজিম উদ্দিন ভুইয়ার দুর্নীতির তথ্য যাচাই করতে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি ২০১৩ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত একটি অডিট ফার্মের মাধ্যমে অডিট করানো হয়।

বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নিয়োগকৃত অডিট ফার্মের অডিটে আজিম উদ্দিন ভুইয়ার বিরুদ্ধে ৩৬ লাখ ৭৭ হাজার ৫১০ টাকা আত্মসাতের তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়।

প্রধান শিক্ষক কর্তৃক গত ১০ বছরে আত্মসাৎকৃত ৩৬ লাখ ৭৭ হাজার টাকা পাঁচ কর্ম দিবসের মধ্যে বিদ্যালয় তহবিলে ফেরত দিতে গত ২৬ অক্টোবর বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির প্রধান অধ্যক্ষ মোহাম্মদ আলী স্বাক্ষরিত একটি নোটিশ দেয়া হয়েছে।

বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘নিয়ম অনুযায়ী প্রতি দুই বছরে একবার অডিট করতে হয়। কিন্তু গত ১১ বছর কোনো অডিট হয়নি মিরসরাই বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে। আমি দায়িত্ব নেয়ার পর এসব অনিয়ম নজরে আসে। অডিট কর্তৃপক্ষ যে প্রতিবেদন দিয়েছে তাতে দেখা গেছে ভুয়া ভাউচারের ছড়াছড়ি। এসব ভাউচার দিয়ে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয় তহবিল থেকে টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেছেন। আমরা তার কাছে নোটিশ দিয়েছি যাতে বিদ্যালয়ের টাকা ফেরত দেয়। নোটিশে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে টাকা ফেরত না দিলে আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা নিব।’

চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান প্রফেসর ইলিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘মিরসরাই বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আজিম উদ্দিন ভুইয়ার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের তদন্ত প্রতিবেদন বোর্ডের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আপিল এন্ড আরবিট্রি কমিটি বছরে একবার বা প্রয়োজনে একাধিকবার শুনানি করে। আমি সেই কমিটির প্রধান। আমরা শিগগিরই শুনানির আয়োজন করব। শুনানি থেকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’

Advertisement

Link copied!