নোয়াখালীর বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার বুড়িরচর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের হাজির বাজার সংলগ্ন বড়দেইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ঘটেছে চাঞ্চল্যকর এক ঘটনা। বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ইয়াসিনের বিরুদ্ধে এক ছাত্রীকে অশালীন আচরণের অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়রা ক্ষুব্ধ হয়ে তাকে গণধোলাই দিয়ে বিদ্যালয় থেকে তাড়িয়ে দেন।
একজন শিক্ষক সমাজের আলোকবর্তিকা- কিন্তু যখন সেই শিক্ষকই শিক্ষার্থীর নিরাপত্তার হুমকি হয়ে দাঁড়ান, তখন সেটা শুধু একটি বিদ্যালয়ের নয়, পুরো শিক্ষাব্যবস্থার ব্যর্থতা। বুড়িরচরের এই ঘটনাটি শুধু ইয়াসিন নামের এক ব্যক্তির নয়- এটা নৈতিক অবক্ষয়ের এক নির্মম প্রতিচ্ছবি।
স্থানীয়দের প্রশ্ন, কবে বদলাবে শিক্ষার এই কলঙ্কিত চিত্র?
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বড়দেইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ইয়াসিন দীর্ঘদিন ধরে ওই বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন। স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, ইয়াসিনের বিরুদ্ধে এর আগেও একাধিকবার ছাত্রী ও সহকর্মী নারী শিক্ষকের সঙ্গে অনৈতিক আচরণের অভিযোগ উঠেছিল। বিষয়গুলো নিয়ে তাকে বহুবার সতর্কও করা হয়, কিন্তু তিনি সংশোধন না হয়ে বরং আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন।
বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থী প্রতিদিনের কাগজকে বলেন মাস্টার ইয়াসিন ক্লাসে এমনভাবে কথা বলেন যে, মেয়েরা বিব্রত হয়ে পড়ে। কেউ প্রতিবাদ করলে তিনি নম্বর কেটে দেওয়ার ভয় দেখান। খারাপ ভিডিও দেখান বলেও ছাত্রীরা জানায়।
অভিযুক্ত ইয়াসিনের অশালীন আচরণের শিকার এক ছাত্রী তার পরিবারের কাছে ঘটনাটি খুলে বললে তারা তাৎক্ষণিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কাছে বিষয়টি জানান। কিন্তু প্রধান শিক্ষক কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় ক্ষোভে ফেটে পড়ে স্থানীয় জনগণ।
গত মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিদ্যালয় চলাকালীন সময়ে ক্ষুব্ধ অভিভাবক ও স্থানীয়রা ইয়াসিন মাস্টারকে ধরে গণধোলাই দেন এবং তাকে বিদ্যালয় থেকে বের করে দেন।
অভিভাবক সাইফুল ইসলাম প্রতিদিনের কাগজকে বলেন এই ইয়াসিন অনেকদিন ধরে সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছিল। আগে আমরা চুপ থেকেছি ভাবছিলাম বদলে যাবে, কিন্তু এবার যা করেছে সেটা মেনে নেওয়া যায় না। স্কুলের পরিবেশ সে নষ্ট করেছে।
আরেকজন অভিভাবক মোহাম্মদ ওসমান ক্ষোভ প্রকাশ প্রতিদিনের কাগজকে বলেন, আমরা আমাদের সন্তানদের নিরাপদ শিক্ষার জন্য স্কুলে পাঠাই। শিক্ষক যদি এরকম হয়, তাহলে বিশ্বাস করবো কাকে?
স্থানীয়রা বাসিন্দা ডাঃ জামসেদ উদ্দিন প্রতিদিনের কাগজকে বলেন, প্রধান শিক্ষক ও শিক্ষা অফিসের কর্মকর্তাদের উদাসীনতাই ইয়াসিনের মতো শিক্ষকদের সাহসী করে তুলছে। তাই সে দিন দিন বেপরোয়া হয়ে যাচ্ছে এবং কোমলমতি শিশুদের সাথে অশালীন কর্মকাণ্ড করে বেড়াচ্ছে, যা শিক্ষা ক্ষেত্রের ভাব মূর্তি নষ্ট করছে।
তিনি আরো বলেন, ক্লাস ফাইভের মেয়েদের কে অশ্লীল ভিডিও দেখাইয়া একাধিক মেয়ের শরীরে হাত দেয় সে কেমন ধরনের শিক্ষক আমাদের মাথায় আসে না, তার বিরুদ্ধে দৃষ্টান্ত মূলত বিচার চাই আমরা সকল অভিভাবকরা।
স্কুলের দাতা সদস্য মোহাম্মদ হাবিব উল্ল্যাহ (ছোট মিয়া) প্রতিদিনের কাগজকে বলেন, বিষয়টি আমরা জেনেছি, তদন্ত করে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত হয়। ইয়াসিন মাস্টারের এর আগেও অনেক অভিযোগ রয়েছে সে নষ্ট। তবে এমন অপরাধ ক্ষমার অযোগ্য, শিক্ষা অফিসের দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
অভিযোগের বিষয়ে মতামত নিতে মুঠো ফোনে অভিযুক্ত সহকারী শিক্ষক ইয়াসিন আরাফাতকে কল দিলে প্রতিদিনের কাগজের বলেন, আমি এখন আপনার সাথে কথা বলতে পারবো না, ফোনে চার্জ নেই বলেন কল কেটে দেন।
এই বিষয়ে বড়দেইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনোয়ার হোসেন ভূইয়া প্রতিদিনের কাগজকে বলেন, ছাত্রী এবং ছাত্রীর অভিভাবক আমাকে মৌখিক ভাবে জানিয়েছেন, আমি তাদের অভিযোগ পেয়েছি। এবং সত্যতা পাওয়া যায়।
তিনি আরো বলেন বিষয়টি আমি সহকারী শিক্ষা অফিসার মাহবুবুর রহমানকে মৌখিক ভাবে জানানো হলে তিনি স্কুল ভিজিটে আসেন। তখন অভিভাবক ও স্কুলের একজন দাতা সদস্যসহ বিষয়টি ওনাকে জানান এবং তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবেন বলে জানিয়েছিলেন।
হাতিয়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল জব্বার প্রতিদিনের কাগজকে বলেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এর আগেও তার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ শুনেছি, প্রমাণ পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ ঘটনার পর পুরো পুরো উপজেলায় তীব্র ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। অভিভাবকরা দাবি করেছেন, শুধু স্কুল থেকে তাড়িয়ে দিলেই হবে না, তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে- না হলে অন্য শিক্ষকরাও সাহস পাবে।
এদিকে স্থানীয় সুশীল সমাজ বলছেন, এমন ঘটনায় শুধু শিক্ষক নয়, বিদ্যালয়ের প্রশাসনকেও জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।।
আপনার মতামত লিখুন :