ঝালকাঠিতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ৬৮০ কোটি টাকার নদীর তীররক্ষা প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। নিম্নমানের বালু ব্যবহার, বালু-সিমেন্টের ভুল অনুপাত, কম ওজনের জিও ব্যাগ এবং অদক্ষ তদারকির কারণে প্রকল্পের কাজের গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এসব অনিয়ম উদঘাটনের পর প্রকল্প থেকে একজন এসওকে প্রত্যাহার করা হয়েছে এবং বাতিল করা হয়েছে নিম্নমানের বালু-ব্লক।
১৩ কিলোমিটারের প্রকল্প, শুরু হয়েছে মাত্র ১৭ প্যাকেজের কাজএকনেক অনুমোদিত ‘সুগন্ধা নদীর ভাঙনরোধে সদর ও নলছিটি উপজেলা রক্ষা প্রকল্প’-এর ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৮০ কোটি ১৩ লাখ টাকা। ১৩.২১৫ কিলোমিটার এলাকায় ৩৪টি প্যাকেজের কাজ হওয়ার কথা থাকলেও এখনো শুরু হয়নি অর্ধেকের বেশি। চলতি বছরের জানুয়ারিতে শুরু হওয়া প্রকল্পটি শেষ হওয়ার কথা ২০২৭ সালের জুনে। ইতোমধ্যে পাউবো জানায়, ২১ শতাংশ কাজ শেষ, আর ঠিকাদারদের দেওয়া হয়েছে ১৫ শতাংশ বিল।
কুতুবনগরে নিম্নমানের বালু ও ব্লকের অভিযোগ: ৯ নভেম্বর কুতুবনগর সাইটে দেখা যায়, নিম্নমানের বালু দিয়ে ব্লক তৈরি করা হয়। এলাকাবাসীর অভিযোগের পর বালু বাতিল করা হয় এবং দায়িত্বরত এসওকে প্রত্যাহার করা হয়। ওয়ার্ক অ্যাসিস্ট্যান্ট পংকজ কুমার সরকার জানান—১.৫০ ঋগ বালু দেওয়ার নিয়ম থাকলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এমভিবিুএমটিআই ঔঠ ব্লক তৈরি করছিল ১.৩৭ ঋগ বালু দিয়ে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ আরও গুরুতর—“এখানে এক ঋগ বালু দিয়েই ব্লক তৈরি হয়েছে।”সাইটে এখনো বাতিল করা বালু ফেলে রাখা হয়েছে। এ বিষয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী নিলয় পাশা বলেন, “পাহারা বসানো আছে, নিম্নমানের বালু দিয়ে আর কাজ হবে না।”
কম ওজনের জিও ব্যাগ নিয়ে সন্দেহ: জিও ব্যাগের মান নিয়েও ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী প্রতিটি ব্যাগে ২৭৫ কেজি বালু থাকার কথা। কিন্তু ওজন করতে বলা হলে ঠিকাদারি কর্মকর্তারা স্কেল তালাবদ্ধ—এই অজুহাত দেখান।এলাকাবাসী দাবি—নদীতে যেসব ব্যাগ ফেলা হচ্ছে সেগুলোর বালুর মান ‘শূন্য দশমিক ৮ ঋগ’ হওয়া সম্ভব নয়। টাস্কফোর্স আগে ওজনে কম হওয়ায় ৪০০ বস্তা বালু বাতিল করেছে।
ভাটারাকান্দায় তদারকি শূন্য—বিপদজনক স্থানে ব্যাগ না ফেলার অভিযোগ ভাটারাকান্দা সাইটে গিয়ে দেখা যায়—শ্রমিকরা ব্লক ঢালাই করলেও পাউবোর কেউ উপস্থিত নেই।এলাকাবাসীরা অভিযোগ করেন—“যেখানে সবচেয়ে বেশি ভাঙন সেখানে ব্যাগ ফেলা হয়নি।এ বিষয়ে এসও ওহিদুল ইসলাম বলেন, পাঁচ-ছয় হাজার ব্যাগ বাকি আছে, তা দিয়েই গ্যাপ পূরণ হবে।
ঠিকাদারদের অজুহাত—“বালু বিক্রির পার্টি পাচ্ছি না”! বাতিল বালু কেন সাইটে ফেলে রাখা—জানতে চাইলে ঠিকাদারি প্রতিনিধি তরিক মৃধা বলেন:“বালু বিক্রির জন্য পার্টি পাচ্ছি না।” তদারকি সংকট স্বীকার করল পাউবো নির্বাহী প্রকৌশলী নিলয় পাশা বলেন “আমাদের লোকবল সংকট।
সব সাইটে সময়মতো যাওয়া সম্ভব হয় না।”চর ভাটারাকান্দায় জিও ব্যাগ না ফেলা প্রসঙ্গে জানান—যান্ত্রিক বার্জ ঢুকতে না পারায় ব্যাগ ফেলা যায়নি, তবে ম্যানুয়ালি ফেলা হবে। বর্তমানে তাদের কাছে ২৪ হাজার জিও ব্যাগ রিজার্ভ আছে। পিডির বক্তব্য: ‘বিষয়টি জানলাম, ব্যবস্থা নেওয়া হবে’ সর্বশেষ প্রকল্প পরিচালক পার্থ প্রতিম সাহা বলেন “অনিয়মের বিষয়গুলো এখন জানলাম। নির্বাহী প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।”
আপনার মতামত লিখুন :