ঘুষ–দুর্নীতির রাজ্যে জাকির–রত্না দম্পতি: বেতন ৬০ হাজার, সম্পদ শত কোটি টাকার

বিশেষ প্রতিনিধি , প্রতিদিনের কাগজ

প্রকাশিত: ০৭ ডিসেম্বর, ২০২৫, ০১:২৫ এএম

 সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের বহু কর্মকর্তা ও কর্মচারীর বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে ঘুষ–দুর্নীতি, সরকারি অর্থ লুটপাট ও ভুয়া বিল–ভাউচার তৈরি করে বিপুল সম্পদ গড়ার অভিযোগ রয়েছে। এ তালিকায় সবচেয়ে আলোচিত নাম পিরোজপুর সওজের বিভাগীয় হিসাব রক্ষক মোঃ জাকির হোসেন ও তার স্ত্রী খুলনা বিভাগের নকশাকার রত্না সুলতানা। অভিযোগ অনুযায়ী, তারা শূন্য থেকে উঠে এখন শত কোটি টাকার মালিক; অবৈধ অর্থে বাড়ি–গাড়ি, জমি, ফ্ল্যাট এমনকি আকাশযান (হেলিকপ্টার) কেনার মত আলোচিত ঘটনাও রয়েছে।

বরগুনা জেলার বামনা উপজেলার রামনা ইউনিয়নের মৃত দেলোয়ার হোসেনের পুত্র জাকির হোসেন তার কর্মজীবন শুরু করেন এজি অফিসে—যেখানে তিনি শুরু থেকেই বিতর্কিত ছিলেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সেই অফিসের কয়েকজন কর্মকর্তার দাবি, জাকির হোসেন ছিলেন “ভদ্রবেশী ভয়ংকর ঘুষখোর”, যিনি সরকারি নথি আটকে রেখে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। আওয়ামী লীগ সরকারের তৎকালীন ক্ষমতাশালী কয়েকজন মন্ত্রী–এমপির সঙ্গে সখ্যতার কারণে তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগই কার্যকর হয়নি।

২০১৮ সালে তাকে বদলি করে সওজের পিরোজপুর অফিসে বিভাগীয় হিসাব রক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। দায়িত্ব পাওয়ার পর তিনি গড়ে তোলেন সাবেক সংসদ সদস্য মহারাজ, আউয়াল এবং সাবেক মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। অভিযোগ রয়েছে—তাদের নেতৃত্বাধীন একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট কয়েক হাজার কোটি টাকার ভুয়া বিল তৈরি করে সওজের টাকার লুটপাট করে, আর সেই পুরো অপকর্মে বিল অনুমোদনের দায়িত্বে ছিলেন জাকির হোসেন।

৫ আগস্ট স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অনেক দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা পালিয়ে গেলেও জাকির হোসেন এখনো বহাল তবিয়তে দায়িত্ব পালন করছেন। অভিযোগ উঠেছে—তিনি বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে প্রভাবশালী মহলকে সন্তুষ্ট রেখে সব অভিযোগ আড়াল করে রেখেছেন। ২০২৪ সালে গণমাধ্যমে আলোচিত হয়—জাকির হোসেন নাকি নিজের অর্থে একটি হেলিকপ্টার ক্রয় করেছেন। বিষয়টি তদন্তে নেমে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বেবিচকের কাছে চিঠি পাঠায় যা বর্তমানে অনুসন্ধানে রয়েছে।

অবৈধ সম্পদের পাহাড়: অনুসন্ধানী তথ্য অনুযায়ী, জাকির হোসেন, তার স্ত্রী রত্না সুলতানা, কন্যা শারমিন সুলতানা, পুত্র শাহরিয়ার হোসেন এবং বোন লাইজু আফরিনসহ পরিবারের সদস্যদের নামে বেনামে বিপুল সম্পদের মালিকানা পাওয়া গেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য—খুলনার সোনাডাঙ্গা থানার বয়রা কলেজ রোডের ১৭৪ নম্বর বাড়ি

সোনাডাঙ্গার ৩ নম্বর রোডের ৩৮৩ নম্বর আলিশান বাড়ি, খুলনা শহরে আরও একাধিক বাসা–বাড়ি,খালিশপুর এলাকায় শ্বশুরবাড়ির নামে বাড়ি ও জমি, বরগুনা–বামনায় বহু জমি ও সম্পত্তি, রাজধানীর ধানমন্ডি, রামপুরা, বনশ্রী, উত্তরা—এলাকায় প্লট–ফ্ল্যাট, পরিবারের সদস্যদের নামে একাধিক গাড়ি, বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্টে বিপুল পরিমাণ অর্থ কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে—জাকির হোসেনের মাসিক বেতন মাত্র ৬০ হাজার টাকা। ফলে আইনগতভাবে কখনোই এ পরিমাণ সম্পদ অর্জন সম্ভব নয়।

দুদকের অনুসন্ধান শুরু:  দুদকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান—গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরগুলো তারা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছেন। এসব তথ্য তদন্ত আরও সহজ করবে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে জাকির হোসেন ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা ও মামলার সুপারিশ করা হবে।

তাদের বক্তব্য জানতে হিসাব রক্ষক জাকির হোসেন ও তার স্ত্রী রত্না সুলতানার সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তারা ফোন রিসিভ করেননি। বরং অভিযোগ রয়েছে—পিরোজপুর জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের কয়েকজন মামলার আসামির মাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ না করতে সাংবাদিকদের হুমকি দেওয়া হয়েছে। এমনকি কিছু সাংবাদিককে আর্থিক প্রস্তাব দেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে।

Advertisement

Link copied!