বৃহস্পতিবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:২৩ পূর্বাহ্ন
আবুল হাসনাত মিনহাজ,চট্টগ্রাম: বিজয়ের মাস শুরু হলে শীতকালীন বিজয় মেলা শুরু হয়। মেলার নামে খেলার মাঠ দখলের শুরু হয় মেলার বাণিজ্য মেলা। চট্টগ্রামের কাজীর দেউড়ির ঐতিহ্যবাহী খেলার মাঠ দখল করে ৭ দিনব্যাপী মেলা বসানোর কার্যক্রম চলমান।স্থানীয় শিশু-কিশোর ও খেলোয়াড়দের খেলাধুলার অন্যতম মাঠটি এখন মেলার দখলে থাকায় বন্ধ রয়েছে সব ধরনের খেলাধুলা। ফলে স্থানীয় প্রশাসনের অনুমোদন মেলার আয়োজনে শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে সব মহলে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
বিজয়ী মেলার ইতিহাস নির্ভর কোন কিছুই থাকে না,মেলায় মাঠ নামে ক্ষতবিক্ষত করে বসানো হয় অসংখ্য বাণ্যিজ্যিক প্রতিষ্ঠান স্টলসহ দেশী-বিদেশী পণ্য দোকান। ফলে মেলা শেষেও অনুপযোগী হয়ে থাকে মাঠ। এ নিয়ে খেলোয়াড়, ক্রীড়া সংগঠক ও সাধারণ মানুষ ক্ষোভ থাকলেও সরাসরি চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে হওয়ায় কোন প্রতিবাদ করার সাহস পাইনি।আবার অনেকে দুঃখ প্রকাশ করে এমন সবুজে ঘেরা সুন্দর মাঠে মেলা করা কোন রকম যুক্তিগত সিদ্ধান্ত নয় বলে দাবি জানান সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারী। চট্টগ্রামের লোকাল খেলোয়াড়দের মাঝেও মেলার নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে।
তবে ইতি মধ্যে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম গণমাধ্যমকে জানান,আউটার স্টেডিয়াম থেকে মেলা সরানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা প্রশাসন।চট্টগ্রামের ক্রিড়ামোদি খেলোয়াড় এবং শিশু-কিশোদের অনুশীলনের বিষয়টি বিবেচনা করে নগরীর কাজির দেউরী মাঠে (আউটার স্টেডিয়াম) অনুষ্ঠিতব্য বিজয় মেলার ভেন্যু পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।’চলো দুর্জয় প্রাণের আনন্দে’ শিরোণামের এই মেলা সিআরবিতে স্থানান্তরের সিদ্ধান্তের কথাও জানান তিনি। আউটার স্টেডিয়াম থেকে মেলা সরানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা প্রশাসন এমন সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানান ক্রীড়া সংস্থা ও চট্টগ্রামের খেলোয়াড়রা।আউটার স্টেডিয়াম থেকে মেলা সরানোয় জেলা প্রশাসনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফেসবুক পোস্ট করেন অনেক
একাডেমির কোচ ও খেলোয়াড়।বর্তমানে কাজির ডিউরি আউটার স্টেডিয়ামে ৮-১২ টি একাডেমির জেলা ও উপজেলার খেলোয়াড়রা প্রশিক্ষণ হিসেবে ব্যবহার করে থাকে। এর মধ্যে রয়েছে চট্টগ্রাম বেসিক ক্রিকেট একাডেমি,ব্রাইট ক্রিকেট একাডেমি, চট্টগ্রাম ব্রাদার্স ক্রিকেট একাডেমি,সি স্পোর্টস একাডেমি সহ চট্টগ্রামের বেশ কয়েকটি একাডেমি। এতে দৈনিক জেলা ও উপজেলার ২০০-২৫০ খেলোয়াড় প্রশিক্ষণ নিয়ে থাকেন। মাঠে মেলা করায় খেলার পরিবেশ ও প্র্যাকটিস করতে পারছে না। অন্যদিকে অনেক একাডেমি মেলার কারণে প্র্যাকটিস বন্ধ ঘোষণা করেছে।
দেশের ক্রীড়াঙ্গনের অনেক অর্জন-সাফল্যের সাক্ষী এই মাঠ। জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক আকরাম খানের মতো খেলোয়াড় তৈরি হয়েছে এই মাঠে খেলে।দীর্ঘদিন দখলদারদের হাত থেকে মুক্ত হওয়া আউটার স্টেডিয়াম ফিরে পায় নতুন ‘প্রাণ’। ৬০ লক্ষ টাকা খরচে সাজানো হয়েছিল আউটার স্টেডিয়াম। সবুজ ঘাসে নান্দনিকভাবে পুরোনো রূপ ফিরে পায় ঐতিহাসিক এ খেলার মাঠে। তিন দশক ধরে পতিত জমিতে পরিণত হওয়া আউটার স্টেডিয়াম যেন ‘সবুজ গালিচা’ ভরা।পুরো মাঠ সবুজ ঘাসে ভরে যাওয়ায় এটি আশপাশের এলাকার চেহারাও বদলে দিয়েছে। তবে এমন পরিবর্তন ছিল চ্যালেঞ্জের; ছিল অনেক কঠিনও। তারপরও হারিয়ে যাওয়া সবুজ ঘাসের নান্দনিক আউটার স্টেডিয়ামটি চট্টগ্রামবাসীকে আবারও ফিরিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক।
২০২৩ সালে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসকের ঘোষণা খেলার মাঠে আর হবে না মেলা। ভবিষ্যতে খেলার মাঠে কোন ধরণের মেলাসহ সকল প্রকার মেলা আয়োজন বন্ধের ঘোষণা করেন সাবেক জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান। ২০২৩ সালে (৯ মার্চ) রাতে আধাঁরে চট্টগ্রামের এম এ আজিজ স্টেডিয়াম সংলগ্ন আউটার স্টেডিয়ামে ‘লিডিং ই কমার্স সোসাইটি,চট্টগ্রাম নামে একটি প্রতিষ্ঠান মেলার আয়োজন শুরু করেছিলো,পরে খবর পেয়ে সেখানে ছুটে যান জেলা প্রশাসন এর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো:তৌহিদুল ইসলাম,সদর সার্কেলের সহকারী কমিশনার ভুমি মো: রাজিব হোসেন।জেলা প্রশাসকের নির্দেশে মেলাটি বন্ধ করে দেন তারা।তখন বিষয়টি দেশের শীর্ষ গণমাধ্যমে শিরোনাম হয় ”ভবিষ্যতে খেলার মাঠে কোন ধরণের মেলা নয় : চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক”।
চট্টগ্রাম শহরের শিশু-কিশোর ও তরুণদের খেলাধুলা ও শরীরচর্চার প্রাণকেন্দ্র আউটার স্টেডিয়াম। আগামী ৯ ডিসেম্বর সোমবার থেকে সেখানে শুরু হতে চলছে ৭ দিন ব্যাপী বিজয় মেলা। এ মেলার আয়োজনের খবরে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া শুরু হয় শহরজুড়ে। বিতর্কের মুখে স্টেডিয়ামে মেলা না করার ঘোষণা দিলেও চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবার কিভাবে এমন একটি উদ্যোগ গ্রহণ করবে তা নিয়ে প্রশ্ন ছিল জনমনে?
খেলোয়াড়দের অনেকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, মাদকমুক্ত দেশ গঠনের জন্য সারা দেশে কিশোর-কিশোরী এবং তরুণ-তরুণীদের খেলার প্রতি আহ্বান জানানোর কথা,কিন্তু কিভাবে খেলার মাঠ নস্ট করে মেলার আয়োজন তা বর্তমান ক্রীড়া উপদেষ্টার কাছে আমাদের চট্টগ্রামের খেলোয়াড় ও ক্রীড়া সংস্থার কাছে প্রশ্ন। খেলা রুদ্ধ করে মেলা বসছে স্টেডিয়ামে। এটি কোনোভাবেই কাম্য নয়। চট্টগ্রামে আরও অনেক গুলো স্থান রয়েছে সেখানেও মেলাটি করা যেত। তবুও খেলার মাঠে মেলা হওয়াটি খুবই দুঃখজনক। বর্তমান পরিস্থিতিতে মেলার নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেন অনেকে। গত ২৫ নভেম্বর ২০২৪ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দের সাথে টাইগারপাসস্থ চসিক কার্যালয়ে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন,চট্টগ্রাম নগরীর ৪১ টি ওয়ার্ডে খেলার মাঠ করতে চান।
এবিষয়ে সাবেক জাতীয় দলের ফুটবলার মনির হোসেন (মনি) বলেন, চট্টগ্রাম আউটার স্টেডিয়ামে বিজয় মেলা বন্ধ করার মতো এখনো হাতে সময় আছে। সিটি মেয়র চাইলে জেলা প্রশাসক এর সাথে কথা বলে মেলা বন্ধের সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। চট্টগ্রাম মহানগরে তেমন কোন ভালো মাঠ নেই, জেলা উপজেলার খেলোয়াড়রা এ মাঠে প্র্যাকটিস করে। এই মাঠ রক্ষার দায়িত্ব বর্তমান সরকারের কাছে আবেদন থাকবে। অবিলম্বে মেলার অনুমোদন বন্ধ করে খেলার উন্মুক্ত হবে অনেকেই আশা প্রকাশ করে।