শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ১১:২৭ অপরাহ্ন

কালের সাক্ষী কালীগঞ্জের এশিয়ার বৃহত্তম বটগাছ 

কালের সাক্ষী কালীগঞ্জের এশিয়ার বৃহত্তম বটগাছ 

জাহাঙ্গীর হোসেন, কালীগঞ্জ: ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলা শহর থেকে ১০ কি.মি. পূর্বে মালিয়াট  ইউনিয়নের বেথুলী মৌজার  সুইতলা-মল্লিকপুরে ১১ একর জমিজুড়ে এশিয়ার সর্ববৃহৎ এ বটগাছটির অবস্থান। ১৯৮২ সালের আগ পর্যন্ত এশিয়ার সবচেয়ে বৃহত্তম বটগাছ ছিল কলকাতার বোটানিকেল গার্ডেনের একটি বটগাছ। পরবর্তী সময়ে বিবিসির এক তথ্যানুষ্ঠানে ‘মল্লিকপুরের বটগাছই এশিয়া মহাদেশের বৃহত্তম ’-এমন শিরোনামে প্রতিবেদন প্রচার করা হয়।স্থানীয়রা এ বটগাছটিকে সুইতলা মল্লিকপুরের বটগাছ নামে চেনে। ৮নং মালিয়াট ইউনিয়নের বেথুলী মৌজায় প্রায় ১১ একর জমি নিয়ে  এ বটগাছটি বিস্তৃত। গাছটির উচ্চতা আনুমানিক ২৫০ থেকে ৩০০ ফুট। ১৯৮৪ সালে বিবিসির জরিপে  এশিয়া মহাদেশের বৃহত্তম স্বীকৃতি পাওয়া এ বটগাছটির নামকরণে রয়েছে নানান কিংবদন্তী।কারও কাছে এটি সুইতলার বটগাছ, কারও কাছেআবার সুইতলা মল্লিকপুরের বটগাছ আবার কারও কাছে এটি কেবল বেথুলীর বটগাছ নামে পরিচিত। হঠাৎকরে দেখলে মনে হবে যেন ৫২ টি বটগাছ একসাথে দাড়িয়ে ১ টি বটগাছে রুপ নিয়েছে।
২০০৯ সাল থেকে যশোর সামাজিক বন বিভাগ এ বটগাছটির দেখভাল করে আসছে।গাছটি কে বা কারা লাগিয়েছেন তার কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই কারো কাছ, তবে ধারণা করা হয় গাছটি প্রায় ২০০ থেকে ৩০০ বছরের পুরোনো হতে পারে। জনশ্রুতি আছে, এখানে আগে কুমারদের বসতি ছিল। সে কুমার পরিবারের কোনো একটি পানির কুয়োর মধ্যে আজকের বটগাছটির জন্ম হয়। স্থানীয়দের মুখে গাছটি সম্পর্কে আরও কথিত আছে, অনেক বছর আগে কুদরতউল্লাহ নামের একজন স্থানীয় বাসিন্দা বটগাছটির একটি ডাল কাটলে অসুস্থ হয়ে পড়েন। এসময় তার রক্তবমি শুরু হয়। পরে কুদরতের স্ত্রী বট গাছ আগলে ধরে কান্নাকাটি করেন এবং স্বামীর প্রাণ ভিক্ষা চান। অবশেষে তার স্বামী সুস্থ হয়ে ওঠে, এমনই চমকপ্রদ সব গল্প শোনা জায় মল্লিকপুরবাসীর মুখে মুখে।বটগাছটিকে কেন্দ্র করে বাংলা ১৩৬০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় বেথুলী মল্লিকপুর বাজার। এ বাজারের প্রথম দোকানদার ছিলেন মল্লিকপুর গ্রামের বেলায়েত আলী, বেথুলী গ্রামের স্বরজিত কুমার সাহা, মমতাজ ডাক্তার, মল্লিকপুরের মুনছুর বিশ্বাস ও মথুরাপুর গ্রামের হামিদুল ইসলাম।
বটতলায় কালীপূজার জন্য তৈরি করা হয়েছে একটি স্থায়ী পিঁড়ি । চাপরাইল গ্রামের গৌর পদ অধিকারী এবং হাজারী লাল অধিকারীর আর্থিক সহায়তায় এটি নির্মান করা হয়।স্থানীয় সাবেক ইউ পি সদস্য কবিরুল ইসলাম জানান, অযত্ন-অবহেলা, রক্ষণাবেক্ষণের অভাব এবং নানামুখী অব্যাবস্থাপনার কারনে ঐতিহ্যবাহী এ বটগাছটির অস্তিত্ব আজ বিলীন হতে চলেছে। মল্লিকপুর গ্রামের বেলায়েত মিয়া বেঁচে থাকা পর্যন্ত তিনি বটগাছটির দেখাশোনা করতেন। নিজ সন্তানের মতো ভালোবাসতেন এ গাছটিকে।
সে কারনেই তিনিই সর্বপ্রথম এই বটগাছের পাশে দোকান তুলে বাজার প্রতিষ্ঠা করেন।১৯৯৮ সালে কালীগঞ্জ উপজেলার তৎকালীন নির্বাহী কর্মকর্তা সুশেন চন্দ্র রায়ের সহযোগিতায় সেখানে একটি ফুলের বাগান তৈরি করা হয়। বটগাছের চারপাশ ঘিরে একটি প্রাচীরও নির্মাণ করা হয়। এশিয়া মহাদেশের বৃহত্তম বটগাছের ঐতিহাসিক দিক বিবেচনা করে অনেক স্থান থেকে প্রতিদিন দর্শনার্থীরা আসেন এখানে। এ বটগাছের গুরুত্ব বিবেচনা করে ১৯৯০ সালে পাশেই একটি রেস্ট হাউজ নির্মাণ করা হয়।মল্লিকপুর গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তি আব্দুর রাজ্জাক জানান, এ গাছটির বয়স কত তা আশেপাশের গ্রামের লোকজন বলতে পারে না। তিনি মুরব্বিদের কাছে শুনেছেন ৩০০ বছরের বেশি হবে। যে স্থানে মূল বটগাছের শুরু ঐ স্থানের আশেপাশে কুমার সম্প্রদায়ে বাস ছিল। সেনদের জায়গায় একটি পাতকুয়া ছিল। কোনো পাখি হয়তো কুয়োর ওপর বটের বীজ এনে ফেলেছে। সে বীজ থেকেই বটগাছটির চারা গজায় বলে ধারনা করা হয়। আস্তে আস্তে বেড়ে ওঠা গাছটি একসময় বিস্তৃর্ণ জায়গা দখল করে।
বাড়তে বাড়তে এক সময় প্রায় ২ একর জায়গা দখল করে নেয় গাছটি। পরিচিতি পায় এশিয়ার সর্ববৃহৎ বটগাছ হিসবে। হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ গাছের গোড়াতে পূজা-অর্চনা শুরু করে। একসময় শান্ত-নির্জন থাকলেও লোকসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে বটগাছ এলাকায় সেই নির্জনতা এখন আর নেই।এশিয়া মহাদেশের বৃহত্তম এ বটগাছটির ঐতিহাসিক দিক বিবেচনা করে দেশ ও বিদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিদিন দর্শনার্থী এখানে বেড়াতে আসেন । পাশেই আছে ১৯৯০ সালে নির্মিত ঝিনাইদহ জেলা পরিষদের রেস্ট হাউস। বিস্তৃত বটগাছটির দৃষ্টিনন্দন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, পাখির কলরব আর  ছায়াঘেরা শীতল পরিবেশ মুগ্ধ করে ঘুরতে আসা দর্শনার্থীদের।

শেয়ার করুন

Comments are closed.




দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ © All rights reserved © 2024 Protidiner Kagoj |