রবিবার, ০৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৪৫ অপরাহ্ন
রাজধানীর পান্থপথের আবাসিক হোটেলে নারী চিকিৎসকের গলাকাটা মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় অভিযুক্ত রেজাউল রেজাকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে অভিযুক্ত জানান, এ হত্যাকাণ্ড ছিলো পরিকল্পিত।
শুক্রবার (১২ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানান সংস্থাটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি বলেন, অভিযুক্তকে মামলার পর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করে র্যাব। তিনি গ্রেপ্তারের পর বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য র্যাবকে জানান।
হত্যাকাণ্ডের পর অভিযুক্ত ভিকটিমের মোবাইল নিয়ে যান, যাতে কোন প্রমাণ না থাকে যে তার সাথে ভিকটিমের যোগাযোগ ছিল।
তবে, সিসিটিভি ফুটেজে র্যাব দেখতে পায় হত্যায় ব্যবহার করা অস্ত্র অভিযুক্ত একটি ব্যাগে বহন করে। সেই ব্যাগটিও উদ্ধার করেছে র্যাবের অভিযানকারী দল।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার রেজাউল রেজা জানান, ২০১৯ সালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার সাথে পরিচয় হয় নিহত নারী চিকিৎসক জান্নাতুল নাঈম সিদ্দীকের (২৭)। পরে ২০২০ সালের অক্টোবরে পালিয়ে বিয়ে করেন তারা। এ বিয়েতে মত ছিলো না নিহত নারীর পরিবারের।
বিয়ের পর রেজা অন্যান্য আরো নারীর সাথে সম্পর্কে জড়ান, যা মেনে নিতে না পারায় নানান সময়েই জান্নাতুলের সাথে তার বিতণ্ডা হতো হত্যাকারীর। কিন্তু ভিকটিম নারী সব স্বাভাবিক করার চেষ্টা চালিয়ে যান।
প্রেস ব্রিফিং-এ র্যাব জানায়, গ্রেপ্তারকৃতের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘেঁটে র্যাব অনুধাবন করতে পারছেন রেজাউল রেজা একজন কুরুচিপূর্ণ ব্যক্তি। তিনি বিকৃত মানসিকতা ধারণ করেন।
হত্যার দিন ওই নারীকে পরিকল্পিতভাবে রেজা পান্থপথে ফ্যামিলি সার্ভিস অ্যাপার্টমেন্ট আবাসিক হোটেলে নিয়ে যান। আজ অর্থাৎ ১২ আগস্ট (শুক্রবার) ছিলো জান্নাতুলের জন্মদিন। বর্ণাঢ্যভাবে জন্মদিন পালনের প্রলোভনে ওই নারী চিকিৎসককে তিনি হোটেলে আনেন।
অভিযুক্ত জানান, শুক্রবার রাতে তারা সুন্দরভাবে জন্মদিন উদযাপন করবেন প্রলোভনে তিনি ওই নারীকে নিয়ে আসেন। কিন্তু ১০ আগস্ট বাক-বিতণ্ডার এক পর্যায়ে অভিযুক্ত রেজা তার ব্যাগ থেকে ছুরি বের করে ওই নারীকে হত্যা করে।
রেজা স্বীকার করেছেন, বেশ কিছুদিন ধরে ওই নারী চিকিৎসককে হত্যার পরিকল্পনা করছিলেন।হত্যার পর তিনি গোসল করে অন্য জামা পরিধান করে হত্যায় ব্যবহৃত অস্ত্র ও পরিধানের কাপড় নিয়ে বের হয়ে আসেন। এরপর তিনি চট্টগ্রামে গিয়ে এক নিকটাত্মীয়ের সহায়তায় একটি মেসে আশ্রয় নেন।
এছাড়া তিনি কিভাবে এই ঘটনা থেকে বাঁচতে পারেন, সে জন্য একজন আইনজীবীর সাথেও পরামর্শ করেন। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, জান্নাতুল রাজধানীর মগবাজার কমিউনিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে এমবিবিএস পাস করেছেন। তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গাইনি বিষয়ের একটি কোর্সে পড়াশোনা করছিলেন।
অপরদিকে রেজাউল একটি বেসরকারি ব্যাংকে চাকরি করেন। পুলিশ বলছে, ১০ আগস্ট সকালে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে আবাসিক হোটেলটিতে উঠেছিলেন দু’জন। পরে রাত আটটার দিকে রেজাউল হোটেল থেকে বেরিয়ে যান। দিবাগত রাত ১২টার দিকে তাকে ফোন করেন হোটেলের ব্যবস্থাপক।
তখন রেজাউল জানান, কিছুক্ষণের মধ্যে তিনি হোটেলে ফিরবেন। গভীর রাতেও না ফিরলে হোটেল থেকে আবার তাকে ফোন দেওয়া হয়। এবারও রেজাউল জানান, তিনি ফিরে আসবেন।
এর কিছুক্ষণ পর মুঠোফোন বন্ধ করে দেন রেজাউল। এতে হোটেল কর্তৃপক্ষের সন্দেহ হয়। পরে হোটেলের কক্ষে গিয়ে জান্নাতুলের গলাকাটা মরদেহ দেখতে পায় তারা। তখন বিষয়টি পুলিশকে জানানো হয়।