সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৪৩ অপরাহ্ন

ময়মনসিংহ ক্লিনিকে মৃত্যু ঝুঁকিতে রোগীরা

ময়মনসিংহ ক্লিনিকে মৃত্যু ঝুঁকিতে রোগীরা

সেলিম সরকার, নিজস্ব সংবাদদাতা : বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের একমাত্র সর্ববৃহৎ চিকিৎসা কেন্দ্র ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল। আর এ হাসপাতালকে ঘিরেই গড়ে উঠেছে কয়ক হাজার বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। যার বেশিরভাগই অবৈধ। তবে তা দেখার কেউ নেই। আর এ সুযোগেই ময়মনসিংহ শহরে অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চিকিৎসার নামে চলছে প্রতারণার মহাৎসব।

প্রতিটি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিকের রয়েছে আলাদা আলাদা দালালচক্র। এরা ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এলাকাসহ শহরের বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে মোড়ে নিয়োজিত। এছাড়া দালালচক্রের সদস্যরা গ্রাম থেকে নিরহ রোগীদের মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে এসব ক্লিনিকে নিয়ে সর্বস্ব কেড়ে নেয় চিকিৎসার আগেই। কখনও আবার ভুল চিকিৎসায় লাশ হয়ে ফিরতে হয় রোগীদের বাড়িতে।

জানা গেছে, ময়মনসিংহ নগরীতে শহরের বিভিন্ন অলি-গলিতে গজিয়ে উঠা এসব ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাইসেন্স ও সরকারি নীতিমালার তোয়াক্কা না করেই চলছে চিকিৎসা কার্যক্রম। প্রতিনিয়তই চিকিৎসা ও রোগ নির্ণয়ের নামে রোগীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা।

সম্প্রতি ময়মনসিংহের ত্রিশাল থেকে আজিদা বেগম (৪০) এসেছিলেন ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসা নিতে। এসেছিলেন মা হতে । কিন্তু শহরে পা রাখতেই কাদির নামের দালালের খপ্পরে পড়েন তিনি। দালালের সহযোগিতায় শহরের মেরিট মেডিকেল সার্ভিস বাঘমারা নিয়ে ডাঃ শহিদুল ইসলাম ফরিদ কে দেখান । ডাক্তার ফরিদ তিনি অর্থোপেডিসের ডাক্তার হলেও রোগী দেখেন গাইনির। অবশেষে তার ভুল চিকিৎসার কারণে অসহায় মহিলাটি আর মা হতে পারিনি। এই ভুয়া ডাক্তারের ভুল চিকিৎসায় অকালেই পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হয় তাকে।

এদিকে ময়মনসিংহ শহরে প্রায় এক হাজার ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার থাকলেও জেলা সিভিল সার্জন অফিসের হিসাব মতে লাইসেন্স রয়েছে মাত্র ৭৭ টির। বাকিগুলো চলছে পৌরসভার ট্রেড লাইসেন্স অথবা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাইসেন্স প্রক্রিয়াধীন এমন আবেদন দেখিয়ে। অভিযোগ রয়েছে, বাগমারা মোড়ে অবস্থিত মেরিট মেডিকেল সার্ভিস নতুন উদ্বোধন করেছেন। নামে মাত্র আবেদন করেই চিকিৎসার কার্যক্রম শুরু করেছেন। আবার ডাক্তারদের ভিআইপি চেম্বার করে দিয়েছেন। প্রতিদিন বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা রোগীদের দেখেন।

অভিযোগ আছে, মেরিট মেডিকেল সার্ভিসে ভিআইপি চেম্বারে রোগী দেখেন ডাঃ শহিদুল ইসলাম ফরিদ নামের এক অর্থপেডিসের ডাক্তার। অনুসন্ধানে জানা যায়, তার জাতীয় পরিচয়পত্র তিনটি। একেকটি পরিচয় পত্র একেক নাম। জানা গেছে, ডাক্তার শহিদুল ইসলাম নামের অর্থপেডিক্সের ডাক্তার তিনি ঢাকায় রোগী দেখেন। এই ব্যক্তির নামও রেজিস্ট্রেশন ব্যবহার করে ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে ফরিদ নামের এক ব্যক্তি নিয়মিত রোগী দেখেন। তার আসল নাম
একটি ভোটার আইডি কার্ডের লেখা “মোঃ শহিদুল ইসলাম ” আরেকটিতে লেখা শাহ মোঃ ফরিদ উজ্জামান।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অধিকাংশ ক্লিনিকে প্রয়োজনীয় ডাক্তার, নার্স, অপারেশন থিয়েটার ছাড়াই চলছে চিকিৎসা কার্যক্রম। অথচ সরকারি নীতিমালায় ১০ শয্যার একটি ক্লিনিকে ৩ জন এমবিবিএস ডাক্তার, ৬ জন ডিপ্লোমা নার্স, ৬ জন আয়া এবং ৩ জন সুইপার নিয়োগ বাধ্যতামূলক থাকলেও কয়েকটি ক্লিনিক ছাড়া এসবের ধার ধারছেনা অন্যগুলো।

অনেক ক্লিনিক মালিক নার্সদের ডাক্তার পরিচয় দিয়ে চিকিৎসার নামে রোগীদের কাছ থেকে প্রচুর টাকা হাতিয়ে নেয়।

ময়মনসিংহ শহরে ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অনুসন্ধান চালিয়ে পাওয়া গেছে আরও ভয়াবহ তথ্য। শহরের ভাটিকাশর, বাগমারা, ব্রাহ্মপল্লী, চরপাড়া, মাসকান্দা, বাগমারা মোড়, ধোপাখোলা মোড়সহ অনেক ক্লিনিক মালিকরা ছিলেন এক সময় নার্স কিংবা আয়া। আর এ নার্সরাই তাদের পছন্দের দালালদেরকে বিয়ে করে অথবা পার্টনার নিয়ে শুরু করেন ক্লিনিক ব্যবসা। তারই সুবাদে বনে গেছেন ক্লিনিক মালিক। এসব ক্লিনিকে পরিচিত কিছু ডাক্তাররের নাম ব্যবহার করে বড় বড় সাইনবোর্ড লাগিয়ে রোগীদের সঙ্গে করা হচ্ছে নানা প্রতারণা।

মেরিট মেডিকেল সার্ভিসের ম্যানেজার হামিদুল ইসলাম জানান, তার কোন সনদ আছে কিনা আমি জানিনা। আমি খোঁজখবর নিব। এই চিকিৎসক প্রতিনিয়ত মেরিজ মেডিকেল সার্ভিস এ রোগী দেখে ভিজিট নেন : নতুন ৭০০ টাকা। পুরাতন রোগী ৫০০ টাকা।

শেয়ার করুন

Comments are closed.




দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ © All rights reserved © 2024 Protidiner Kagoj |