সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র তালাবদ্ধ থাকায় হয়রানির স্বীকার হয়েছেন পরিদর্শনে আসা উপজেলার দায়িত্বরত কর্মকর্তা। মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) দুপুরে দোয়ারাবাজার উপজেলার বোগলাবাজার ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে এই ঘটনা ঘটে।
জানা যায়, দৈনন্দিন কাজের রুটিন অনুযায়ী মঙ্গলবার দুপুরে বোগলাবাজার ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে পরিদর্শনে যান দোয়ারাবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আবু সালেহীন খাঁন। কিন্তু সেখানে গিয়ে স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি তালাবদ্ধ দেখতে পেয়ে কেন্দ্রের সামনের সিঁড়িতে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকেন তিনি। একপর্যায়ে ক্লান্ত হয়ে সেখানেই অপরিচ্ছন্ন সিঁড়িতে বসে থাকতে দেখা যায় এই কর্মকর্তাকে। পরে স্থানীয় ইউপি সদস্য বুলবুল আহমেদের সহযোগিতায় একপর্যায়ে তালা ভেঙে স্বাস্থ্য কেন্দ্রের বিতরে ডুকেন তিনি। এসময় তিনি সাথে করে এই স্বাস্থ্য কেন্দ্রের জন্য চলতি মাসের বরাদ্দকৃত ঔষধ ও বিভিন্ন চিকিৎসা সামগ্রী নিয়ে যান।
জানা যায়, বোগলাবাজার ইউনিয়ন পরিবার কল্যাণ ও স্বাস্থ্য কেন্দ্রে পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের দায়িত্বরত কর্মকর্তা, উপ সহকারি কমিউনিটি অফিসার সুলতানা জাহান
দীর্ঘদিন ধরে মাতৃত্বকালীন ছুটিতে আছেন। আগামী ১৯শে অক্টোবর তার ছুটি শেষ হওয়ার কথা। আর এসময় অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছিলেন বাংলাবাজার ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে কর্মরত পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শিকা কোহিনূর বেগম (FWV)। কিন্তু মঙ্গলবার ব্যক্তিগত ইচ্ছেই স্বাস্থ্য কেন্দ্র তালাবদ্ধ রেখে অনুপস্থিত ছিলেন তিনি। গুরুত্ব দেননি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা পরিদর্শনে আসার বিষয়টি।
ভোগান্তির স্বীকার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার ডা.আবু সালেহীন খাঁন জানান, তিনি পূর্ব থেকেই FWV কোহিনুর বেগমকে অবগত করে গর্ভবতি মা ও শিশু স্বাস্থ্য সেবার জন্য রক্ত,প্রস্রাব, ডায়বেটিস, উচ্চরক্তচাপ সহ বিভিন্ন রোগের প্রাথমিক রোগ নির্ণয় করতে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি নিয়ে বোগলাবাজার ইউনিয়ন পরিবার কল্যাণ ও স্বাস্থ্য কেন্দ্রে যান। কিন্ত সেখানে গিয়ে তালাবদ্ধ দেখতে পাওয়ায় এবং তাদের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করার পরেও চাবি নিয়ে কেউ আসেনি। এতে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যেে সাথে যোগাযোগ করে ক্লান্ত শরীরে সিঁড়িতে বসে বিশ্রাম নেন।
পরে ইউপি সদস্যের উপস্থিতিতে বাধ্য হয়ে মূল ফটকের তালা ভেঙে বিতরে ডুকতে হয়।
এদিকে স্থানীয়রা জানায়,বোগলাবাজার ইউনিয়ন পরিবার কল্যাণ ও স্বাস্থ্য কেন্দ্রের দায়িত্বরত কর্মকর্তা, উপ সহকারি কমিউনিটি অফিসার সুলতানা জাহান ছুটিতে থাকার আগেও গ্রামীন জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য সেবার মাধ্যম জনগুরুত্বপূর্ণ এই স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি প্রায়ই তালাবদ্ধ থাকে। স্বাস্থ্য সেবা নিতে আসা মানুষজনদের প্রতিদিনই খালি হাতে ফিরে যেতে হয়। বেশি ভোগান্তিতে পরেন গর্ভবতী মহিলারা। প্রত্যন্ত অঞ্চলের জনগোষ্ঠীর এই স্বাস্থ্য সেবার মাধ্যমটিতে নেই উপজেলার সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের তদারকি। ফলে অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে সরকারি সম্পত্তি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দীর্ঘদিন এই স্থাপনা অব্যবহৃত অবস্থায় থাকায় বিতরণকৃত ওষুধ পত্র স্টক রেজিস্টার ছাড়াই খালি হয়ে গেছে। স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ভিতরে এক ভুতুড়ে পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। এ যেনো এক পরিত্যক্ত কোন স্থাপনা। যা রহস্যজনক।
অন্যদিকে, এ ঘটনার কিছুক্ষণ পর সাংবাদিকদের উপস্থিতি ঠের পেয়ে একজন পরিচ্ছন্নকর্মী এসে স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি পরিষ্কার করতে দেখা যায়।
এ বিষয়ে দোয়ারাবাজার উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (UFPO) সামছুদ্দিন আহমদ জানান, গতকালের ঘটনাটি নিয়ে ডা.আবু সালেহীন সাবের সাথে আমার আলাপ হয়েছে। মূলত বোগলাবাজার ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রের সকল পদ খালি রয়েছে। সরকারি ঔষধ নষ্ট হচ্ছে এমন কিছুই জানা হয়নি।
পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের সুনামগঞ্জ জেলা ডেপুটি ডিরেক্টর ( DDFP) তপন কুমার দাস বলেন, বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। বিষয়টি আমি দেখছি।
আপনার মতামত লিখুন :