বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অব্যবস্থাপনা এখন চরমে। ভাঙা দরজা, নোংরা টয়লেট আর পানির সংকটে দুর্ভোগে পড়ছেন রোগী ও তাদের স্বজনরা। এমনকি টয়লেট ব্যবহার করতে গেলেও স্বজনদের বাইরে পাহারায় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়—যেন কেউ দরজা না খুলে ফেলে!
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, হাসপাতালের অধিকাংশ টয়লেটের দরজা ভাঙা, কোথাও দরজার পরিবর্তে ব্যবহার হচ্ছে ময়লা চাদর। বেশিরভাগ টয়লেটে পানি নেই, ফলে ব্যবহার শেষে পরিষ্কার রাখা সম্ভব হয় না। নারী রোগীদের জন্য আলাদা টয়লেট থাকলেও তা সম্পূর্ণ ব্যবহার অনুপযোগী। এমনকি ভিআইপি কেবিনের বাথরুমের অবস্থাও বেহাল। দীর্ঘদিন ধরে এ অবস্থার কোনো পরিবর্তন না হওয়ায় ক্ষোভ দেখা দিয়েছে রোগী ও তাদের স্বজনদের মধ্যে।
রোগীর মোঃ হানিফ বলেন , “এখানে টয়লেট ব্যবহার করা মানে মানসিক কষ্ট ভোগ করা। কেউ দরজার ওপাশে না দাঁড়ালে ব্যবহার করা যায় না। পানি নেই, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতারও কোনো ব্যবস্থা নেই।”
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অনুমোদিত ২০৭টি পদের মধ্যে ১১৪টি পদ শূন্য। পরিচ্ছন্নতা কর্মী থাকার কথা ৫ জন, কিন্তু বর্তমানে রয়েছেন মাত্র একজন। ফলে ৫০ সজ্জার হাসপাতাল ও পুরো প্রাঙ্গণ পরিস্কার রাখা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
একমাত্র কর্মরত পরিচ্ছন্নতা কর্মী জানান, “রোগীর চাপ এখন অনেক বেশি। একপাশ পরিষ্কার করতে করতেই অন্য পাশে আবার নোংরা হয়ে যায়। একা এত বড় হাসপাতাল পরিষ্কার রাখা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।”
হাসপাতালের এক কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “টয়লেটগুলোর অবস্থা অত্যন্ত খারাপ। রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব থাকলেও জনবল সংকটের কারণে নিয়মিত পরিষ্কার করা সম্ভব হয় না।”
মানবিক কর্মী মেহেদী সিকদার প্রতিদিনের কাগজকে জানান পাথরঘাটা হসপিটালের ভাঙা দরজা, পানি নেই, টয়লেটে নেই নিরাপত্তা—এ যেন স্বাস্থ্যসেবায় লজ্জার চিত্র। পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যেন এখন রোগীদের জন্য নয়, নিজেই এক “রোগী” হয়ে পড়েছে । চাই দ্রুত সংস্কার, চাই মানবিক পরিবেশ।
এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নীল রতন সরকার প্রতিদিনের কাগজকে বলেন, “অবকাঠামোগতভাবে পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অবস্থা নাজুক। দীর্ঘদিন ধরে টয়লেট ও বাথরুমসহ সার্বিক স্যানিটেশন ব্যবস্থার উন্নয়ন হয়নি। আমরা নিয়মিতভাবে রক্ষণাবেক্ষণের চেষ্টা করি, কিন্তু জনবল সংকটের কারণে সব জায়গা একসাথে পরিষ্কার রাখা সম্ভব হয় না।”
তিনি আরও বলেন, “সমস্যাগুলো আমরা নিয়মিতভাবে উচ্চ কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে আসছি। ইতোমধ্যে নতুন পরিচ্ছন্নতা কর্মী নিয়োগের জন্য অনুরোধ পাঠানো হয়েছে। পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে কিছু অস্থায়ী উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে যেন রোগীরা অন্তত টয়লেট ব্যবহারে কিছুটা স্বস্তি পান। আশা করছি, দ্রুত সংস্কার ও নতুন নিয়োগের মাধ্যমে হাসপাতালের সার্বিক পরিবেশের উন্নতি ঘটবে।”
আপনার মতামত লিখুন :