নিজস্ব প্রতিবেদক: ময়মনসিংহ নগরীর প্রখ্যাত ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জামিয়া ফয়জুর রহমান (রহঃ)-এ শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে চলমান দ্বন্দ্বে অস্থিরতা চরম আকার ধারণ করেছে। স্থানীয় সূত্র ও সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, এ সংঘাতের পেছনে রয়েছে নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগী সংগঠনগুলোর পরিকল্পিত উসকানি ও প্রভাব বিস্তারের প্রচেষ্টা।
প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে মাদরাসাটিতে প্রশাসনিক দায়িত্ব বণ্টন ও আদর্শিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধ চলে আসছিল। সম্প্রতি সেই বিরোধ সংঘর্ষে রূপ নিলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। শিক্ষার্থীরাও বিভক্ত হয়ে বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে যুক্ত হন। স্থানীয় রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের প্রত্যক্ষ মদদে একপক্ষের আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টাই পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ফলে প্রতিষ্ঠানের স্বাভাবিক পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। কয়েক দফা উত্তেজনা ও বিক্ষোভের পর ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশ, জেলা গোয়েন্দা সংস্থা (ডিবি), র্যাব এবং সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
শিক্ষা বিশ্লেষক ও ধর্মীয় নেতারা মনে করছেন, ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ অত্যন্ত বিপজ্জনক। তারা বলেন, “জামিয়া ফয়জুর রহমান (রহঃ)-এর মতো প্রতিষ্ঠানে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার শুধু ধর্মীয় শিক্ষার পরিবেশকেই ক্ষতিগ্রস্ত করছে না, বরং সমাজের সার্বিক শান্তি ও শৃঙ্খলাকেও হুমকির মুখে ফেলছে।”
ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শিবিরুল ইসলাম জানান, যেকোনো অস্থিতিশীলতা এড়াতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। তবে শিক্ষা সংশ্লিষ্টদের মতে, সংকটের স্থায়ী সমাধান হবে তখনই, যখন ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো সম্পূর্ণভাবে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত হবে এবং ধর্মীয় মূল্যবোধের ভিত্তিতে শিক্ষার পরিবেশ পুনর্গঠিত করা যাবে।
এদিকে, ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসকের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে জানানো হয়েছে—
গতকাল ২৭ অক্টোবর ২০২৫ তারিখ বাদ মাগরিব জামিয়ার পরিচালনা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় মুফতি আব্দুল হকসহ সকল সদস্য উপস্থিত ছিলেন। সভায় মাদরাসার বর্তমান পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হয় এবং মুফতি আব্দুল হক সাহেবের উপস্থাপিত সকল দাবি-দাওয়া বিশদভাবে আলোচনা শেষে গ্রহণ করা হয়। মিটিং শেষে জেলা প্রশাসক সকলকে আপ্যায়নের মাধ্যমে হাসিমুখে বিদায় দেন। সভা শেষে মুফতি আব্দুল হক ও মুফতি শহিদুল্লাহ উভয়ে পরস্পরকে কোলাকুলি করে সমঝোতার মাধ্যমে মাদরাসায় দায়িত্ব পালনের অঙ্গীকার করেন। তবে কিছুক্ষণ পর জানা যায়, মুফতি শহিদুল্লাহ মাদরাসায় গেলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাঁকে মারধর করে গুরুতর আহত করেন। জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে এ ঘটনাকে “অত্যন্ত দুঃখজনক” বলে উল্লেখ করা হয়েছে এবং সবাইকে ধৈর্য ও সহনশীলতার পরিচয় দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। প্রশাসনের দাবি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ঘটনাটি তদন্ত করছে এবং দোষীদের আইনের আওতায় আনতে কাজ চলছে।
আপনার মতামত লিখুন :