গাজায় আবারও শুরু হয়েছে রক্তক্ষয়ী সহিংসতা। দক্ষিণ রাফায় গুলি বিনিময়ের পর ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর নির্দেশে চালানো নতুন হামলায় অন্তত ২০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে নারী ও শিশু রয়েছে। এ ঘটনায় একজন ইসরায়েলি সেনা আহত হয়েছে। বাংলাদেশ সময় বুধবার (২৯ অক্টাবর) সকালে আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় ১০ অক্টোবর কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতির পর এটিই সবচেয়ে বড় সহিংসতা বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
হামাসের সামরিক শাখা কাসাম ব্রিগেড অভিযোগ করেছে, ইসরায়েল যুদ্ধবিরতির শর্ত ভঙ্গ করেছে। ফলে তারা নিখোঁজ বন্দীদের মৃতদেহ হস্তান্তরের পরিকল্পনা স্থগিত করেছে। সংগঠনটি সতর্ক করে বলেছে, ইসরায়েলের এই হামলা মৃতদেহ অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযানকে বিপর্যস্ত করবে এবং গাজায় অবশিষ্ট ১৩ বন্দীর দেহ উদ্ধারে বিলম্ব ঘটবে।
গাজার স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, উত্তর গাজার সাবরা পাড়ায় এক আবাসিক ভবনে হামলায় চারজন এবং দক্ষিণ খান ইউনিসে আরও পাঁচজন নিহত হয়েছেন। এছাড়া অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছেন। আল-শিফা হাসপাতালের কাছে একটি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানলে হাসপাতালে থাকা রোগী ও চিকিৎসাকর্মীদের মধ্যে তীব্র আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য, হামলার শব্দ এতটাই প্রবল ছিল যে কয়েক কিলোমিটার দূর থেকেও শোনা যাচ্ছিল।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ হামলার দায় হামাসের ওপর চাপিয়ে বলেছেন, সৈন্যদের ওপর হামলার জবাবে গোষ্ঠীটিকে বড় মূল্য দিতে হবে।
মার্কিন সংবাদ সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের তথ্যমতে, হামলার আগে ওয়াশিংটনকে আগাম অবহিত করেছিল তেল আবিব।
গাজার সরকারি তথ্যকেন্দ্র জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর থেকে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৯৪ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। একই সঙ্গে তারা মানবিক সহায়তার প্রবাহও কঠোরভাবে সীমিত করে রেখেছে।
হামাস এক বিবৃতিতে বলেছে, চলমান বোমাবর্ষণ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পৃষ্ঠপোষকতায় স্বাক্ষরিত যুদ্ধবিরতি চুক্তির স্পষ্ট লঙ্ঘন। সংগঠনটি চুক্তির প্রতি প্রতিশ্রুত থাকার কথা পুনর্ব্যক্ত করেছে।
গাজার হামাস নেতা সুহাইল আল-হিন্দি বলেন, ‘আমরা যতটা সম্ভব মৃতদেহ উদ্ধার করার চেষ্টা করছি। কিন্তু প্রতিটি বিলম্বের জন্য সম্পূর্ণ দায় ইসরায়েলের।’
বিশ্লেষকদের মতে, নেতানিয়াহু ইচ্ছাকৃতভাবেই যুদ্ধবিরতির সীমা পরীক্ষা করছেন। ইউরোপীয় কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনসের গবেষক মুহাম্মদ শেহাদা বলেন, ‘নেতানিয়াহু গাজায় নতুন করে গণহত্যার জন্য যুক্তি তৈরি করতে চাইছেন।’
তবে ইসরায়েলি রাজনৈতিক বিশ্লেষক ওরি গোল্ডবার্গ মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্র ও তার আঞ্চলিক মিত্রদের গভীর সম্পৃক্ততার কারণে যুদ্ধবিরতি পুরোপুরি ভেঙে পড়ার আশঙ্কা কম।
কাতার থেকে আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র বর্তমানে গাজার ঘটনাপ্রবাহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। তাদের অনুমোদন ছাড়া ইসরায়েল বড় কোনো সামরিক পদক্ষেপ নিচ্ছে না।
বিশ্লেষকদের মতে, ইসরায়েল এখন এমন এক যুদ্ধবিরতি বজায় রাখতে চাইছে, যেখানে তারা নিজের শর্তে হামলা চালাতে পারবে এবং সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে রাখবে।
আপনার মতামত লিখুন :