আফগানিস্তানের সঙ্গে স্থায়ী যুদ্ধবিরতির জন্য আলোচনা ব্যর্থ হয়েছে বলে জানিয়ে পাকিস্তান। পাশাপাশি দেশটি সতর্ক করে দিয়েছে, পাকিস্তান তাদের জনগণকে রক্ষা করার জন্য পদক্ষেপ নেবে। আজ বুধবার তারা এই খবর জানিয়েছে।
পাকিস্তান এবং আফগানিস্তান ইস্তাম্বুলে আলোচনায় বসেছে।
দক্ষিণ এশিয়ার এই দুই প্রতিবেশীদের মধ্যে বছরের পর বছর ধরে ভয়াবহ সীমান্ত সংঘর্ষের পর শান্তি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এই আলোচনা হয়। যদিও তাতে সমস্যা সমাধানে কোনো উপায় বের হয়নি বলে পাকিস্তান দাবি করেছে। গত ৯ অক্টোবর কাবুলে বিস্ফোরণের পর ৭০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত এবং শত শত আহত হয়। এরপর সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে, যার জন্য তালেবান কর্তৃপক্ষ পাকিস্তানকে দায়ি করেছে।
কাতার ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় চার দিনের আলোচনার পর তথ্যমন্ত্রী আতাউল্লাহ তারার এক্সে বলেছেন, ‘দুঃখজনকভাবে আফগান পক্ষ কোনো আশ্বাস দেয়নি। মূল সমস্যা থেকে সরে গেছে। তারা দোষারোপ, বিচ্যুতি ও কৌশল অবলম্বন করেছে। এইভাবে সংলাপ কোনো কার্যকর সমাধান আনতে ব্যর্থ হয়েছে।
তারার জানিয়েছেন, পাকিস্তান শান্তি ফিরিয়ে আনার লক্ষ্য নিয়েই আফগানিস্তানের সঙ্গে কথা বলেছে। তবে তিনি অভিযোগ করেছেন, কাবুলের পাকিস্তান-বিরোধী সন্ত্রাসীদের অবিরাম সমর্থন করে গেছে। তিনি বলেন, ‘সন্ত্রাসবাদের হুমকি থেকে আমাদের জনগণকে রক্ষা করার জন্য আমরা প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ গ্রহণ অব্যাহত রাখব। সন্ত্রাসবাদী, তাদের আশ্রয়স্থল, তাদের মদদদাতা এবং সমর্থকদের ধ্বংস করে ফেলা হবে।’
অন্যদিকে আফগানিস্তানের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
একসময়ের মিত্র, যারা ২ হাজার ৬০০ কিলোমিটার (১৬০০ মাইল) সীমান্ত ভাগ করে নিয়েছে। তাদের মধ্যে সম্পর্ক সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইসলামাবাদের অভিযোগের কারণে তিক্ত হয়ে উঠেছে। পাকিস্তানের অভিযোগ, আফগানিস্তান ‘জঙ্গি গোষ্ঠী’গুলোকে আশ্রয় দিচ্ছে এবং পাকিস্তানে হামলা চালাচ্ছে।
ইসলামাবাদের জন্য বিশেষ উদ্বেগের গোষ্ঠীর নাম, তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি) গোষ্ঠী। এই দলটির বিরুদ্ধে ইসলামাবাদ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে। তারারের বিবৃতি অনুসারে, পাকিস্তান তালেবান কর্তৃপক্ষকে অভিযোগ করেছিল, টিটিপিকে আফগানিস্তানের ভূখণ্ডকে প্রশিক্ষণসহ সরকারি ঘাঁটি এবং সন্ত্রাসী কার্যকলাপের জন্য ব্যবহার করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তালেবান সরকার ধারাবাহিকভাবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।
৯ অক্টোবর কাবুলে বিস্ফোরণের পর তালেবানরা প্রতিশোধমূলক সীমান্ত আক্রমণ শুরু করে, যার প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তানও সাড়া দেয়। দোহায় আলোচনার পর ১৯ অক্টোবর কাতার ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় দ্বিতীয় যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার আগে প্রাথমিক ৪৮ ঘন্টার যুদ্ধবিরতি বাতিল হয়ে যায়।
দুই প্রতিবেশীর মধ্যে সীমান্ত দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ রয়েছে। কেবল পাকিস্তান থেকে বের করে দেওয়া আফগানদেরই পার হতে দেওয়া হচ্ছে। আফগানিস্তানের সীমান্তবর্তী শহর স্পিন বোলদাকে সোমবার একজন চালক এএফপিকে বলেছিলেন, ‘ট্রাকগুলোতে ফল পচে যাচ্ছে।’
২৫ বছর বয়সী গুল বলেন, ‘৫০ থেকে ৬০টি ট্রাক রয়েছে। কিছুতে আপেল, অন্যটিতে ডালিম এবং আঙ্গুর। আমরা অপেক্ষা করছি এবং সরকারকে সীমান্ত পুনরায় চালু করার আহ্বান জানাচ্ছি।’
পাকিস্তানের একটি নিরাপত্তা সূত্র মঙ্গলবার জানিয়েছে, আফগান তালেবান প্রতিনিধিদল প্রাথমিকভাবে টিটিপির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য ইসলামাবাদের আহ্বানে সম্মত হয়েছে। কিন্তু কাবুলের নির্দেশের পরে আফগান পক্ষ বারবার তার অবস্থান পরিবর্তন করেছে।
পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ শনিবার সতর্ক করেছিলেন, চুক্তিতে পৌঁছাতে ব্যর্থ হলে ‘খোলা যুদ্ধ’ শুরু হতে পারে। মঙ্গলবার আফগানিস্তানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আব্দুল মতিন কানি বলেছেন, যেকোনো আক্রমণের জবাব এমনভাবে দেওয়া হবে ‘যা পাকিস্তানের জন্য শিক্ষা এবং অন্যদের জন্য বার্তা হিসেবে কাজ করবে।’
কানি আফগান সংবাদমাধ্যম আরিয়ানা নিউজকে বলেন, ‘এটা সত্য যে, আমাদের কাছে পারমাণবিক অস্ত্র নেই। কিন্তু ন্যাটো বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কেউই ২০ বছরের যুদ্ধ সত্ত্বেও আফগানিস্তানকে পরাজিত করতে পারেনি।’
সোমবার আফগানিস্তানে জাতিসংঘের মিশন এএফপিকে জানিয়েছে, সহিংসতায় এক সপ্তাহে কমপক্ষে ৫০ জন আফগান বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং ৪৪৭ জন আহত হয়েছে। বেসামরিক হতাহতের বিস্তারিত বিবরণ না দিয়ে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী ১২ অক্টোবর জানিয়েছে, ২৩ জন নিহত এবং ২৯ জন আহত হয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :