হাতিয়া উপজেলা বিএনপি: দুঃসময়ের নেতারা কি ফিরবেন সুসময়ের মঞ্চে?

মামুন রাফী , নোয়াখালী জেলা সংবাদদাতা

প্রকাশিত: ১৬ অক্টোবর, ২০২৫, ০৬:৫৮ পিএম

ফাইল ছবি

বঙ্গোপসাগরের বুকের দ্বীপ হাতিয়া, যেখানে রাজনীতি মানে ব্যক্তি, প্রতিপক্ষ আর প্রতিশ্রুতির যুদ্ধ। দলের দুর্দিনে যখন অনেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন, তখন বিএনপির পতাকা হাতে রাজপথে ছিলেন মোহাম্মদ আলাউদ্দিন রনি। আজ সেই ত্যাগী নেতার মূল্যায়ন নিয়েই প্রশ্ন ঘুরছে দ্বীপজুড়ে।

হাতিয়া দ্বীপের রাজনীতির ঢেউ এখানে কখনো স্থির নয়। কখনও ফজলুল আজিম, কখনও অধ্যাপক ওয়ালী উল্যাহ, আবার কখনও মোহাম্মদ আলী ব্যক্তিকেন্দ্রিক প্রভাবের এই দ্বীপে বিএনপির সাংগঠনিক পুনর্জাগরণ ঘটিয়েছিলেন একজনই: মোহাম্মদ আলাউদ্দিন রনি। আজ সেই স্বর্ণপুরুষই দলের ভেতর ষড়যন্ত্রের নিশানায়।

তথ্য বলছে, আওয়ামী লীগ সরকারের পুরো সময় আলাউদ্দিন রনি ছিলেন হাতিয়ার রাজনীতির মেরুদণ্ড। মামলা, হামলা, নির্যাতন কিছুই তাকে দমাতে পারেনি। ব্যবসা ধ্বংসের মুখে পড়েও দলের পতাকা ছাড়েননি। তাঁর মতো নেতা তখনই রাজপথে, যখন বাকিরা আত্মগোপনে।

স্থানীয়রা বলছেন— দলের দুঃসময়ে যে নেতা বুক পেতে ছিল, তাকে উপেক্ষা করা মানে হাতিয়ার বিএনপির আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের নেতৃত্ব থেকে উঠে আসা রনি হাতিয়া উপজেলা বিএনপির সফল সভাপতি হিসেবে দুইবার দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৩ সালের উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়ে মাত্র আধা ঘণ্টায় পান ১৭ হাজার ভোট। এরপর ভোটকেন্দ্র দখল করে বন্ধ করে দেওয়া হয় ভোটগ্রহণ তবুও হার মানেননি তিনি।

রাজনৈতিক সংকটে তিনি ছিলেন নেতাকর্মীদের আশ্রয় ও সাহসের প্রতীক।

রফিকুল ইসলাম ক্ষোভভরে বলেন, রনি ভাইয়ের মতো ত্যাগী নেতাকে যদি বাদ দেওয়া হয়, তাহলে কেউ আর দলের জন্য জীবন দেবে না।

বুড়িরচর ইউনিয়নের মুদি দোকানদার জসীম বলেন, বিএনপির দুঃসময়ে আমরা রনি ভাইকে আমরা সবাই পাশে পেয়েছি। দল তাকে অবহেলা করা উচিত নয়। 

আমতলী বাজারের কৃষক বাকের হোসেন বলেন, রাজনীতিতে মানুষ চেনে কাজের মাধ্যমে। আলাউদ্দিন ভাই সেই কাজ করেছেন।

ব্যবসায়ী সেলিম মোল্লা যোগ করেন, রাজনীতির কারণে তার ব্যবসা বন্ধ হয়েছে। এত ত্যাগের পরও যদি তাকে উপেক্ষা করা হয়, তবে ভবিষ্যতে আর কেউ দলের জন্য ঝুঁকি নেবে না।

নোয়াখালী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির একজন জানান, হাতিয়ার মতো কৌশলগত অঞ্চলে ত্যাগী নেতাদের অবমূল্যায়ন মানেই বিএনপির আত্মঘাতী ভুল।

দলের ভেতরের বিভাজন ঠেকাতে, মাঠে ঐক্য ফিরিয়ে আনতে এবং তরুণ প্রজন্মকে সংগঠিত করতে আলাউদ্দিন রনি একমাত্র নেতৃত্বে যোগ্য ব্যক্তি।

তবে স্থানীয় নেতাকর্মীদের মনে এখন প্রশ্ন, দলের সুদিনে কি বিএনপি সেই দুঃসময়ের নেতাকে মর্যাদা দেবে, নাকি আবারও ‘হাইব্রিড সিন্ডিকেট’-এর কাছে নতজানু হবে?

Link copied!