বহিষ্কার থেকে পুনর্বহাল: গাজীপুর বিএনপিতে পাপ্পুর নাটকীয় প্রত্যাবর্তন

আখতার হোসেন , বিশেষ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২৪ অক্টোবর, ২০২৫, ০৩:৫০ পিএম

রাকিব উদ্দিন পাপ্পু সরকার। ছবি- (কোলাজ) প্রতিদিনের কাগজ

দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গ, চাঁদাবাজি ও অনৈতিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগে বহিষ্কারের তিন মাস পর নাটকীয়ভাবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপিতে ফিরলেন গাজীপুর মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক রাকিব উদ্দিন পাপ্পু সরকার।

বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে প্রকাশিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে তাকে পুনরায় দলের প্রাথমিক সদস্য পদে ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে স্বাক্ষর করেন দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাবেক সদস্য ও ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলার অনুগত উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক রফিকুল উদ্দিন আহমেদ বাচ্চু, গাজীপুর মহানগর বিএনপির সাবেক সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক রাকিব উদ্দিন পাপ্পু সরকার, চট্টগ্রাম উত্তর জেলার বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক রুকুন আলমিনসহ আরও কয়েকজনের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে।

অন্যদিকে, দলের ভেতরেই কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন— এত দ্রুত বহিষ্কার প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত কি দলের শৃঙ্খলাবোধকে দুর্বল করবে না?

এর আগে গত ৬ জুলাই, দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ, চাঁদাবাজি এবং আদর্শবিরোধী কার্যকলাপের অভিযোগে পাপ্পু সরকারসহ চার নেতাকে বহিষ্কার করা হয়। বহিষ্কৃত অন্যরা ছিলেন, গাজীপুর মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের আব্দুল হালিম মোল্লা, বিএনপির সাবেক সদস্য জিয়াউল হাসান স্বপন (জিএস স্বপন), এবং টঙ্গী পূর্ব থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব সিরাজুল ইসলাম সাথী।

বহিষ্কারের পরপরই মহানগর বিএনপির সভাপতি সওকত হোসেন সরকার বলেছিলেন “চাঁদাবাজি ও শৃঙ্খলাভঙ্গের মতো অনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে দলকে মুক্ত রাখতে এ সিদ্ধান্ত ছিল সময়োপযোগী।”

কিন্তু মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে একই পাপ্পুর দলে ফেরাটা গাজীপুর বিএনপির রাজনীতিতে নতুন প্রশ্ন তুলেছে। অনেকে একে দেখছেন,দলীয় ঐক্যের প্রয়োজনে কৌশলগত পুনর্বিন্যাস” হিসেবে।

বিজ্ঞপ্তিতে রুহুল কবির রিজভী বলেন, দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে বহিষ্কৃতদের আবেদন পর্যালোচনা করে কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তে তাদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে। তারা দলের প্রতি অনুগত থেকে কাজ চালিয়ে যেতে পারবেন।

গাজীপুর মহানগর বিএনপির একাধিক নেতা বলেন, আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এখন ঐক্যবদ্ধ সংগঠন গড়তে চায়। তাই যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, কিন্তু তারা অনুশোচনা প্রকাশ করেছেন, তাদের ফেরানো হচ্ছে দলে। পাশাপাশি গাজীপুরের অন্যান্য বহিস্কৃত ত্যাগী জনপ্রিয় নেতা ও সিটি কাউন্সিলরদের ফিরিয়ে আনা এখন সময়ের দাবি।

একজন সিনিয়র নেতা বলেন, পাপ্পু সরকারের ফেরাটা গাজীপুর বিএনপির ভারসাম্য ফিরিয়ে আনবে। তিনি মাঠ পর্যায়ে সক্রিয় ছিলেন, যা নির্বাচনের সময় গুরুত্বপূর্ণ।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, পাপ্পুর পুনর্বহাল কেবল একটি ব্যক্তিগত পুনরুত্থান নয়; এটি বিএনপির অভ্যন্তরীণ সংকট নিরসনের “ঐক্য পুনর্গঠনের ইঙ্গিত”।

গাজীপুরের মতো গুরুত্বপূর্ণ নগর রাজনীতিতে বিএনপি বর্তমানে সাংগঠনিক টানাপোড়েনের মুখে রয়েছে। তাই কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব “বিচ্ছিন্ন নেতাদের ফিরিয়ে এনে সংগঠনকে সুসংহত করার চেষ্টা করছে। অন্যদের-ও দ্রুত ফিরিয়ে আনলে আগামী নির্বাচনে মূখ্য ভূমিকা পালন করবে।

Advertisement

Link copied!