ইমাম মুহিব্বুল্লাহ অপহরণ নয়, স্বরচিত নাটক -পুলিশের চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ

আখতার হোসেন , বিশেষ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২৮ অক্টোবর, ২০২৫, ০১:০৫ পিএম

টঙ্গী টিএন্ডটি বাজার জামে মসজিদের খতিব মোহাম্মদ মোহিব্বুল্লাহ মিয়াজি

গাজীপুরের টঙ্গী টিএন্ডটি বাজার জামে মসজিদের খতিব মোহাম্মদ মোহিব্বুল্লাহ মিয়াজির আলোচিত “অপহরণ ও নির্যাতন” ঘটনা আসলে কোনো অপহরণ নয়, বরং তার নিজের স্বরচিত নাটক, এমন তথ্য প্রকাশ করেছে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ।  

মঙ্গলবার  (২৮ অক্টোবর) সকাল ১১টায় গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের সদর দপ্তরের কনফারেন্স রুমে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য জানান টঙ্গী পূর্ব থানার তদন্ত কর্মকর্তা।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের সদর দপ্তরে আয়োজিত ব্রিফিংয়ে তদন্ত কর্মকর্তা জানান, ভিকটিমের বক্তব্য ও প্রমাণের মধ্যে কোন মিল পাওয়া যায়নি। তিনি নিজের সিদ্ধান্তেই গাজীপুর থেকে পঞ্চগড় গেছেন। অপহরণ বা হামলার কোনো প্রমাণ নেই। এটি নিঃসন্দেহে একটি স্বরচিত নাটক।

প্রেস রিলিজে জানা যায়, ২২ অক্টোবর সকাল ৭টার দিকে খতিব মোহিব্বুল্লাহ মিয়াজি মর্নিং ওয়াকে বের হন। তার পরিবার অভিযোগ করে, মরকুন এলাকার একটি সিএনজি ফিলিং স্টেশনের সামনে অজ্ঞাত ৪–৫ জন ব্যক্তি তাকে অ্যাম্বুলেন্সে তুলে চোখ বেঁধে নির্যাতন চালায় এবং পরে পঞ্চগড়ে শিকলবদ্ধ অবস্থায় ফেলে যায়। ২৪ অক্টোবর টঙ্গী পূর্ব থানায় মামলা নং ৫৪ দায়ের হয়।

তদন্তে জিএমপির বিশেষ টিম ঘটনাস্থল থেকে পঞ্চগড় পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে বিশ্লেষণ করে দেখেন “অপহরণের” কোনো চিহ্ন নেই। সিসি ক্যামেরা ফুটেজে দেখা যায়,২২ অক্টোবর সকাল ৭টা থেকে দুপুর পর্যন্ত মোহিব্বুল্লাহ একা হেঁটে যাচ্ছেন।এমন দৃশ্য সিসিটিভিতে ধরা পড়ে। দুপুর ১১টা ৩৬ মিনিটে তাকে ঢাকার সোবাহানবাগ এলাকায় দেখা যায়।দুপুর ২টায় তিনি নিজেই ঢাকার গাবতলী শ্যামলী পরিবহন কাউন্টার থেকে পঞ্চগড়গামী বাসে (ঢাকা মেট্রো ব–১৪–৪৩২৬) টিকিট কেটে উঠে পড়েন। পথিমধ্যে বগুড়ার শেরপুর থানার পেন্টাগন হোটেলে নামাজের বিরতি নেন,সেটির ফুটেজও পুলিশের হাতে এসেছে।বাসচালক, হেলপার ও যাত্রীদের জবানবন্দিতেও দেখা যায় মোহিব্বুল্লাহ ছিলেন সম্পূর্ণ স্বাভাবিক।

পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে মোহিব্বুল্লাহ জানান, পূবাইল থেকে ভোগরা হয়ে ঢাকার গাবতলীতে যান এবং তিনি  হঠাৎ পঞ্চগড় যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। রাতে পঞ্চগড়ে পৌঁছে রাস্তার পাশে নামাজ ও প্রস্রাবের জন্য থামেন। প্রস্রাবের সময় তার কাপড় ভিজে যায়; ঠান্ডা লাগায় তিনি জামা–পাঞ্জাবি খুলে ফেলেন এবং ক্লান্ত হয়ে রাস্তায় বসে ঘুমিয়ে পড়েন।পরদিন সকালে স্থানীয়রা তাকে দেখতে পেয়ে ৯৯৯-এ ফোন করলে পুলিশ উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে।

মহিব্বুল্লাহ আরও বলেন, আমার মনে হচ্ছিল কেউ আমাকে অনুসরণ করছে। হয়তো মানসিক বিভ্রান্তিতে এসব করেছি।

জিএমপি কমিশনার বলেন, প্রথমে বিষয়টিকে আমরা অপহরণ হিসেবে দেখেছিলাম, কিন্তু তদন্তে সব পরিষ্কার হয়েছে।মিথ্যা তথ্য দিয়ে পুলিশ প্রশাসনকে বিভ্রান্ত করা দণ্ডনীয় অপরাধ। তদন্ত শেষে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পুলিশ বলছে, ইমাম নিজে কেন এমন আচরণ করলেন, তার পেছনে কোনো ব্যক্তিগত বা প্ররোচনামূলক কারণ আছে কি না— তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ঘটনার সব দিক স্পষ্ট করে পরে বিস্তারিত প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।

পুরো গাজীপুর মহানগর ও টঙ্গী এলাকায় আলোচিত “গুম ও উদ্ধার” নাটক নিয়ে চলছে ব্যাপক আলোচনা। ধর্মীয় ও সামাজিক মহলে প্রশ্ন? একজন খতিব কেন এমন কাজ করলেন?

পুলিশের তদন্ত শেষ না হলেও ঘটনাটি ইতোমধ্যে স্থানীয় মহলে বছরের অন্যতম চাঞ্চল্যকর ঘটনার রূপ নিয়েছে।

Link copied!