ঢাকা-গাজীপুর যানজটের ৭ কারণ; ৩০ কিলোমিটার পথ, সময় লাগে ৫–৬ ঘণ্টা!

আখতার হোসেন , বিশেষ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২৭ অক্টোবর, ২০২৫, ০৪:৪২ পিএম

ছবি- প্রতিদিনের কাগজ

মাত্র ৩০ কিলোমিটারের পথ। রাজধানী ঢাকা থেকে গাজীপুর পৌঁছাতে সময় লাগার কথা এক ঘণ্টারও কম। কিন্তু বাস্তবে সেই পথ পাড়ি দিতে এখন সময় লাগে পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা। প্রতিদিন ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের প্রতিটি মোড়, সিগন্যাল ও বাসস্ট্যান্ডে লেগে থাকে লম্বা যানজট। কর্মজীবী মানুষ থেকে শুরু করে শিক্ষার্থী, রোগী,সবার নিত্যদিনের ভোগান্তি এখন এই সড়কেই জমে আছে।

ঢাকা–গাজীপুর সিটির যানজটের মূল কারণ হিসাবে উঠে এসেছে ৭ কারণ। তার মধ্যে---(১) বিআরটি প্রকল্পের ব্যর্থতা ও খানা-খন্দ, (২) অবৈধ ও ফিটনেসবিহীন যানবাহন,(৩) যত্রতত্র যাত্রী ওঠানামা,(৪) অটো-পিকআপ-সিএনজি স্ট্যান্ডের অবৈধ দখল,(৫)শ্রমিকসহ বিভিন্ন আন্দোলনে সড়ক অবরোধ, (৬)অনিয়ন্ত্রিত পার্কিং ও(৭) হকারদের সড়ক ও ফুটপাত  দখল। 

অনুসন্ধানে উঠে এসেছে,গাজীপুরবাসীর দুর্ভোগের কেন্দ্রে রয়েছে বহুল আলোচিত বিআরটি (বাস র‍্যাপিড ট্রানজিট) প্রকল্প। যানজট নিরসনের উদ্দেশ্যে শুরু হলেও এটি এখন গাজীপুরের নগরবাসীর জন্য অভিশাপে পরিণত হয়েছে। বছরের পর বছর ধরে চলা খোঁড়াখুঁড়িতে সড়ক হয়েছে ক্ষতবিক্ষত, রাস্তায় সৃষ্টি হয়েছে অসংখ্য গর্ত। বৃষ্টির পানিতে তৈরি হয় জলাবদ্ধতা, ভেঙে পড়েছে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা। পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ হয়েছে যে, সম্প্রতি সরকার বিআরটি প্রকল্প বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু রেখে গেছে বিপর্যস্ত সড়ক ব্যবস্থা যা এখন প্রতিদিনের যাত্রী দুর্ভোগের প্রতীক।

গণপরিবহনের চালক-যাত্রীরা বলছেন,গাজীপুরের রাস্তায় পানি জমে ও গর্তের কারণে গাড়ি বিকল হচ্ছে। তাই যানজট এখন মহাখালী পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে।

গাজীপুরের মহাসড়কে এখন ফিটনেসবিহীন অটো, লেগুনা, পিকআপ ও সিএনজির আধিপত্য। যত্রতত্র যাত্রী ওঠানামা, মাঝরাস্তায় থেমে যাত্রী তোলা–নামানো, এমনকি রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে ভাড়া নিয়ে কথা বলার প্রবণতা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে।

এছাড়া শহরের প্রধান প্রবেশপথ ও মোড়ে অটো-পিকআপ ও সিএনজি স্ট্যান্ডের দখলদারিত্বে মহাসড়ক সংকুচিত হয়ে পড়েছে। টঙ্গী কলেজ গেট, স্টেশন রোড, বোর্ডবাজার, জয়দেবপুর চৌরাস্তা, শিববাড়ী, সবখানেই একই চিত্র। ফলে ট্রাফিক পুলিশের কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে প্রতি মুহূর্তে।

গাজীপুর শিল্পনগরী হওয়ায় এখানে প্রতিদিনই কোনো না কোনো শ্রমিক আন্দোলন হয়। বকেয়া বেতন, ছাঁটাই বা দাবি আদায়ের আন্দোলনে পোশাক শ্রমিকরা প্রায়ই সড়ক অবরোধ করে থাকেন। ট্রাফিক সূত্রে জানা গেছে, যেকোনো ধরনের অবরোধে মহাসড়কের উভয় পাশে দ্রুত জট তৈরি হয় এবং তা ঢাকার দিক পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে।

সম্প্রতি কয়েকটি গার্মেন্টস শ্রমিক বকেয়া বেতনের দাবিতে টঙ্গী ও বোর্ডবাজার এলাকায় সড়ক অবরোধ করলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা স্থবির হয়ে পড়ে যান চলাচল।

পরিবহন বিশৃঙ্খলা ও প্রশাসনিক উদাসীনতার কথা উল্লেখ করে স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করে বলেন, বারবার প্রতিশ্রুতি মিললেও যানজট নিরসনে কার্যকর কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি। সিটি কর্পোরেশন, হাইওয়ে পুলিশ ও সড়ক বিভাগ একে অপরের দায় এড়িয়ে চলছে।

পরিবহন বিশেষজ্ঞদের মতে, এ পরিস্থিতি শুধু অর্থনৈতিক ক্ষতিই নয়, নাগরিক জীবনের মান ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরও ভয়াবহ প্রভাব ফেলছে। তারা অবিলম্বে বিকল্প সড়ক নির্মাণ, ট্রাফিক ব্যবস্থার আধুনিকায়ন ও অবৈধ পার্কিং বন্ধে কঠোর পদক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছেন।

গাজীপুর মহানগর ট্রাফিক বিভাগের ডিসি এস এম আশরাফুল আলম বলেন, আমরা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে দিনরাত কাজ করছি। ট্রাফিক  সিস্টেম এ কলেজ শিক্ষার্থীদের পার্ট টাইম সংযুক্তি প্রস্তাব গৃহীত হলে, চেরাগ আলী ও চৌরাস্তার ময়লার ভাগার সিটি করপোরেশন সরালে,কয়েকটি ইউটার্ণ চালু করলে এবং  শহরের সড়কগুলো দ্রুত সংস্কার করা হলে গাজীপুরবাসী শিগগিরই স্বস্তি পাবে। তাছাড়া গাজীপুরের বিশাল কর্মজীবী জনসংখ্যা ও শিল্পাঞ্চলের চাপ বিবেচনায় আমরা অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করেছি। জনগণের সহযোগিতা পেলে এ পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।

গাজীপুরবাসীর ক্ষোভমিশ্রিত প্রশ্ন?

প্রতিদিন লাখো কর্মঘণ্টা ও কোটি টাকার জ্বালানি অপচয় হচ্ছে।মাত্র ৩০ কিলোমিটার পথেই যদি লাগে ৫ ঘণ্টা, তবে উন্নয়ন কাকে বলে, কত প্রকার?

Link copied!