৪ কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন নিয়ে ইউএনও পিআইও দ্বন্ধ চরমে

উবায়দুল্লাহ রুমি , নিজস্ব সংবাদদাতা

প্রকাশিত: ২৯ অক্টোবর, ২০২৫, ০৭:০৪ পিএম

(বামে) ইউএনও সানজিদা রহমান (ডানে) রেজাউল করিম

ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে টিআর কাবিখা ও কাবিটার কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন নিয়ে ইউএনও ও পিআইওর দ্বন্ধ চরমে পৌঁছেছে। ২০২৫/২৬ অর্থ বছরের ৪ কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকারী নীতিমালা অনুসরণে নিয়ম অনিয়মকে কেন্দ্র করে দুই কর্মকর্তা দ্বন্ধে জড়িয়ে পড়েছেন। 

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা রেজাউল করিম জানান, ২০২৫/২৬ অর্থ বছরে উপজেলার ১১টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানগণ গত সেপ্টেম্বর মাসে টিআর কাবিখা কাবিটার ত্রুটিপূর্ণ প্রকল্প দাখিল করে প্রকল্প কর্মকর্তার কার্যালয়ে। প্রকল্পগুলো যাচাই বাছাই করার আগেই ইউএনও সানজিদা রহমান পিআইও অফিস থেকে প্রকল্পের ফাইল গুলো তলব করে নিয়ে যান। সেই সাথে উপজেলা পরিষদের ২০% কাজের সকল প্রকল্প সদস্য সচিবের সাথে পরামর্শ ও মিটিং না করে অফিস বন্ধের দিন ইউএনও ও তার অফিসের সাবেক অফিস সহকারী মাজহারুল করিমকে সাথে নিয়ে পিআইও অফিসে বসে সংশ্লিষ্ট অফিসের অফিস সহকারীকে দিয়ে প্রকল্পের তালিকা প্রস্তুত করে স্বাক্ষর দিয়ে তালিকা সমূহ পিআইওর স্বাক্ষরের জন্য তার অফিসে রেখে আসেন। পিআ্ইও ত্রুটিপূর্ণ তালিকায় স্বাক্ষর না করে যাচাই বাচাই করার জন্য ইউএনওর কাছে সময় চান। এতে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে পিআইওর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন।

জেলা প্রশাসক অভিযোগের প্রেক্ষিতে ইউএনও ও পিআইওকে তার কার্যালয়ে ডেকে নেন। সেখানে দুজনের বক্তব্য শুনে জেলা প্রশাসক দুই দিনের মাঝে যাচাই বাছাই করে যৌথ স্বাক্ষরিত প্রকল্প দাখিল করার জন্য ডিআরও এবং পিআইওকে নির্দেশ দেন। নির্দেশ মেতাাবেক ডিআরও রেজাউল করিম গত ২৩ অক্টোবর সরেজমিন প্রস্তাবিত প্রকল্প পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনে চেয়ারম্যান কর্তৃক দাখিলকৃত প্রকল্পের সাথে ইউএনও স্বাক্ষরিত প্রকল্প তালিকার গড়মিল পান। ত্রুটিপূর্ণ প্রকল্প সংশোধন করা না হলে এসব প্রকল্প তালিকায় স্বাক্ষর করা সম্ভব নয় বলে জানান পিআইও রেজাউল করিম। 

অপরদিকে ১১ ইউনিয়নের চেয়ারম্যানগণ ২৮ অক্টোবর পিআইওর বিরুদ্ধে ভ্যাট আয়করের নামে তাদের কাছ থেকে গত অর্থ বছরে ২৫% হারে টাকা ঘুষ নেয়ার এবং অসদাচরণের অভিযোগ এনে বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসক বরাবর অভিযোগ দায়ের করেন। পরে চেয়ারম্যানগণ ওইদিন সন্ধ্যায় ঈশ্বরগঞ্জ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন। সংবাদ সম্মেলনে চেয়ারম্যানগণ পিআইওর অপসারণ দাবী করেন। এব্যাপারে পিআইও রেজাউল করিম বলেন ভ্যাট ট্যাক্স বা ঘুষ নেয়ার অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। তাদের বিলের টাকা ক্রস চেকের মাধ্যমে পরিশোধ করা হয়। 

এব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সানজিদা রহমান জানান, গত সেপ্টেম্বর মাসে চেয়ারম্যানগণ পিআইওর অফিসে প্রকল্প জমা দেন। অক্টোবর মাস শেষ হলেও তিনি কোন প্রকল্পই যাচাই বাছাই করেননি, এমনকি তিনি প্রকল্পের সদস্য সচিব হিসেবে কোন সভাও আহবান করেননি। তিনি প্রকল্প সচিব তিনিই মিটিং ডাকবেন আমি ডাকবো কেন? প্রকল্প দাখিলের সময় প্রায় শেষের পথে বিধায় জেলা প্রশাসক মহোদয় দ্রুত প্রকল্প জমা দেয়ার জন্য নির্দেশ দেন। নির্দেশ মোতাবেক গত ১৭ অক্টোবর শুক্রবার নিজ তাগিদে তালিকা প্রস্তুত করে স্বাক্ষর দিয়ে তার স্বাক্ষরের জন্য ফাইল পিআইও অফিসে রেখে ৩ দিনের প্রশিক্ষণের জন্য ঢাকা চলে যাই। অফিসে এসে দেখি পিআইও স্বাক্ষর করেননি। না করার কারন জিজ্ঞাস করা হলে আমার সাথে দুর্বব্যহার করেন। পরে বিষয়টি জেলা প্রশাসক মহোদয়কে অবহিত করি। জেলা প্রশাসক মহোদয়ও তালিকায় স্বাক্ষর করার জন্য বলার পরও সে অস্বীকৃতি জানায়। 

উপজেলা পরিষদের ২০% কাজের তালিকা প্রস্তুতের ব্যাপারে ইউএনও বলেন, এখানে পিআইওর কোন হস্তক্ষেপ নেই। ২০% প্রকল্পের তালিকা ইউএনও প্রস্তত করবেন। ওই তালিকায় পিআইও কিছু প্রকল্প দিতে চেয়েছিলেন। চাহিদা বেশি থাকায় তার প্রকল্প দেয়া সম্ভব হয়নি। তাই তিনি আমার উপর ক্ষুদ্ধ হন। ২০% কাজের যে প্রকল্প গ্রহণ করেছি তাতে কোন অস্বচ্ছতা নেই। প্রয়োজনে প্রকল্প সমূহ জনগণের জ্ঞাতার্থে ফেসবুকে পোস্ট করে দেব। এব্যাপারে আমার কোন দূর্বলতা নেই। গত ২৩ অক্টোবর ডিআরও সাহেব মাঠ পর্যায়ে পরিদর্শন করে ছোটখাট নামের ভুল ছাড়া বড় কোন ত্রুটি পাননি। 

এ বিষয়ে জেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা রেজাউর করিম জানান, মাঠ পরিদর্শন কালে কিছু ত্রুটি পাওয়া গেছে। ত্রুটিগুলো সংশোধন করে তালিকা প্রণয়নের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পিআইওকে বলা হয়েছে। প্রকল্প দাখিলের ব্যাপারে মিটিং করা প্রয়োজন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মিটিং এর রেজ্যুলেশন লাগবে। বিধি মোতাবেক তালিকা প্রস্তুত হতে হবে।

Advertisement

Link copied!