সুন্দরগঞ্জে শরীরে পেট্রল ঢেলে আগুন দেওয়া সেই যুবকের মৃত্যু

নিউজ ডেস্ক , প্রতিদিনের কাগজ

প্রকাশিত: ৩০ অক্টোবর, ২০২৫, ০৬:২১ পিএম

লতিফুর রহমান, সুন্দরগঞ্জ: গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় পারিবারিক কলহ ও পরকীয়ার জেরে নিজের শরীরে আগুন দেওয়া রায়হান মিয়া (২৭) শেষ পর্যন্ত মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছেন। বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) ভোরে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ধোপাডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ মোকলেছুর রহমান মণ্ডল। 

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রায়হান মিয়া দীর্ঘদিন ধরে অনলাইন জুয়া ও অন্য নারীর প্রতি পরকীয়ায় আসক্ত ছিলেন। প্রায় দুই মাস আগে স্থানীয় এক নারীর সঙ্গে অবৈধ মেলামেশা করতে ধরা পড়েন। এলাকাজুড়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি। শাশুড়ির চাপে স্ত্রী আদুরী তখন নিজের গয়না বিক্রি করে স্বামীকে মুক্ত করে নিয়ে আসেন। এরপরও রায়হান আরেক নারীকে বিয়ে করার জন্য স্ত্রীর ওপর চাপ দিতে থাকেন। স্ত্রী রাজি না হলে তাদের দু’জনের মধ্যে নিত্যদিনই কলহ লেগে থাকে। অভিযোগ আছে, এ সময় আদুরীর ওপর তিনি শারীরিক নির্যাতনও চালাতেন। 

অসহ্য নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে কিছুদিন আগে আদুরী বেগম দুই সন্তানকে নিয়ে বাবার বাড়ি চলে যান। গত মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) সকালে রায়হানের বাবা চান মিয়া ও বড় শ্যালক কে সাথে নিয়ে পুত্রবধূ আদুরীকে ফিরিয়ে আনতে শ্বশুরবাড়ি তে যায় । প্রথমে আদুরী আসতে না চাইলেও শ্বশুরের জোরালো চাপে তিনি শর্ত সাপেক্ষে রাজি হন। রায়হান যেন তাঁকে মারধর করতে পারবেন না এবং জুয়া খেলা বন্ধ করতে হবে। 

এ খবর পেয়ে ক্ষুব্ধ রায়হান মোবাইল ফোনে বাবাকে হুমকি দেন ও স্ত্রীকে আনতে নিষেধ করেন। এর কিছুক্ষণ পর বেলা ১১ টার সময় ক্ষোভে নিজের শরীরে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন। আগুনে দগ্ধ অবস্থায় প্রাণে বাঁচতে পানিতে ঝাঁপ দেয়। 

গুরুতর দগ্ধ অবস্থায় তাঁকে প্রথমে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেওয়া হয়। বৃহস্পতিবার ভোরে তিনি মারা যান।

রায়হানের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, পরিবারটি শোকে স্তব্ধ। তাঁর দুলাভাই মোঃ সবুজ মিয়া গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি। পরে দেখা হয় রায়হান মিয়ার কলেজ পড়ুয়া বোনের সঙ্গে। তিনি গণমাধ্যমকর্মীদের দেখে চটে যান। তার বোন ক্ষোভে সংবাদকর্মীদের উদ্দেশে বলেন “ভাইকে আমরা হারালাম, কিছু বলার মতো নেই।”

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুন্দরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ আবদুল হাকিম আজাদ বলেন, “এ ঘটনায় এখনো কোনো লিখিত অভিযোগ বা কাগজপত্র পাইনি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

Link copied!