জাহাজ কেলেঙ্কারিতে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীর ৮ হাজার কোটির রহস্যময় লেনদেন

বিশেষ প্রতিনিধি , প্রতিদিনের কাগজ

প্রকাশিত: ১০ নভেম্বর, ২০২৫, ০৩:২০ পিএম

ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডে নিবন্ধিত তিনটি ভুয়া কোম্পানির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন চট্টগ্রামভিত্তিক প্রভাবশালী ব্যবসায়ী, ইস্টার্ন ব্যাংক পিএলসির চেয়ারম্যান শওকত আলী চৌধুরী। একই ঠিকানায় নিবন্ধিত এই কোম্পানিগুলি থেকে ২০১৫ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে জাহাজ কেনা হয়েছে। বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) কোনো প্রতিষ্ঠানই খুঁজে পায়নি।

স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের চট্টগ্রাম শাখা তিনটি এলসি খোলার মাধ্যমে এই লেনদেনের সঙ্গে যুক্ত। সন্দেহের সূত্রপাত এখান থেকেই, যা পরে ৮ হাজার কোটি টাকার লেনদেন ও একাধিক ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ঘিরে রহস্যময় আর্থিক কার্যক্রমের ইঙ্গিত দেয়।

শওকত আলী চৌধুরী অভিযোগকে “মিথ্যা ও মনগড়া” বলে উড়িয়ে দেন। তিনি দাবি করেন, ৪০ বছরের ব্যবসায়িক জীবনে কখনো কোনো ব্যাংকের ঋণ খেলাপি হননি, ঋণ পুনঃতফসিল বা সুদ মওকুফের আবেদনও করেননি। ২০১৩–১৪ থেকে ২০২৩–২৪ করবর্ষ পর্যন্ত তিনি ও তার পরিবার সেরা করদাতার স্বীকৃতি পেয়েছেন।

সন্দেহের শুরু এলসি থেকে : বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০১৫–২০২৩ সালের মধ্যে এসএন করপোরেশনের নামে তিনটি এলসি খোলা হয়। সুবিধাভোগী ছিল: রেড রুবি গ্রুপ লিমিটেড, ট্যালেন্ট মাইল লিমিটেড, কলাম্বিয়া সিস লিমিটেড

তিনটি কোম্পানিই ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডে নিবন্ধিত এবং ঠিকানা একই। ট্যালেন্ট মাইল ও রেড রুবি গ্রুপের ইমেইলও একই, যা মালিকানা ও স্বার্থসংশ্লিষ্টতা নিয়ে সন্দেহ আরও বাড়ায়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী, উচ্চ ঝুঁকির দেশে লেনদেনের ক্ষেত্রে ব্যাংককে এনহ্যান্সড ডুয়ো ডিলিজেন্স (EDD) করতে হয়। কিন্তু স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক এটি ছাড়াই এলসিগুলি খুলেছে।

সন্দেহজনক লেনদেন ও পাচার : বিএফআইইউ অনুসন্ধান করে জানায়, শওকত আলী চৌধুরী, তার স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে এবং স্বার্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নামে দেশের ২৮টি ব্যাংকে ১৮৭টি হিসাব রয়েছে। চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত এসব অ্যাকাউন্টে জমা হয়েছে ৮,৪০৭ কোটি টাকা, যার মধ্যে তোলা হয়েছে ৮,২৪৭ কোটি টাকা।

পুরোনো জাহাজ আমদানির ১৪১টি এলসি পর্যালোচনা করা হয়েছে। এর মধ্যে অনেক জাহাজের চূড়ান্ত গন্তব্য চট্টগ্রাম ছিল কি না তা নিশ্চিত করা যায়নি। একই জাহাজ সম্পর্কিত তথ্য লয়েডস লিস্টে ভিন্ন ভিন্নভাবে পাওয়া গেছে।

ঢাকা ব্যাংক, জুবিলি রোড শাখা: শওকত আলীর প্লাটিনাম হিসাব থেকে ৩৯৮ কোটি টাকা এসএন করপোরেশনের লেনদেনে ব্যবহার।

ইস্টার্ন ব্যাংক, আগ্রাবাদ শাখা: মেয়ে ও ছেলে-মেয়ের হিসাব থেকে নগদ উত্তোলন ও বিনিয়োগ। মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, আগ্রাবাদ শাখা: অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে অর্থ স্থানান্তর। দি সিটি ব্যাংক, আগ্রাবাদ শাখা: ১০৬ কোটি টাকা স্থানান্তর এসএন করপোরেশনে।

প্রিমিয়ার ব্যাংক, আগ্রাবাদ শাখা: অনুমোদন ছাড়াই এলটিআর সুবিধা। এসব তথ্য ও কাগজপত্র বিশ্লেষণে ৮ হাজার কোটি টাকার রহস্যময় লেনদেনের চিত্র স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

Advertisement

Link copied!