আজীবন শিক্ষার আলো বিলিয়ে যাওয়া শিক্ষক আহসান হাবীব আর নেই

মাহমুদুল হাসান , পাথরঘাটা (বরগুনা) সংবাদাতা

প্রকাশিত: ১০ নভেম্বর, ২০২৫, ০৬:৫০ পিএম

আজীবন শিক্ষার আলো বিলিয়ে যাওয়া এক নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষক আহসান হাবীব আর নেই। দীর্ঘ ৩১ বছরের শিক্ষকতা জীবনে শত শত শিক্ষার্থীকে গড়ে তুলেছেন তিনি। গত ১০ নভেম্বর রাত আনুমানিক ৩.২০ মিনিটে মিরপুর আল-হেলাল স্পেশালাইজড হসপিটালে লাইফ সাপোর্টে থাকাকালীন তিনি ইন্তেকাল করেন। (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজিউন)।

জানা যায়, ১৯৯৬ সালে আহসান হাবীব স্যার ৫৫ পাথরঘাটা মহাবিদ্যালয়ে ইসলামিক স্টাডিস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন। বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার পাথরঘাটা মহাবিদ্যালয়ে তিনি দীর্ঘ ৩১ বছর শিক্ষকতা করেছেন। শিক্ষার্থীদের কাছে তিনি ছিলেন এক অনুপ্রেরণার প্রতীক। নিয়মিত, সৎ ও দায়িত্বশীল এই শিক্ষক ছিলেন সহকর্মীদের কাছেও প্রিয় মুখ।

গত ৮ নভেম্বর রাতে মিরপুর আল-হেলাল স্পেশালাইজড হসপিটালে তাঁর ওপেন হার্ট সার্জারি হয়েছিল। এরপর ৯ নভেম্বর সকালে তাঁর অবস্থার অবনতি দেখা দিলে তাঁকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়।

মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, এক কন্যা ও এক পুত্র সন্তানসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। তাঁর মৃত্যুতে স্থানীয় শিক্ষক সমাজ, সাবেক শিক্ষার্থীরা এবং এলাকাবাসীর মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

পাথরঘাটা মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ মহসিন কবির বলেন, “তিনি শুধু শিক্ষক ছিলেন না, ছিলেন একজন পথপ্রদর্শক। তাঁর অনুপস্থিতি আমাদের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি।”

শুভাকাঙ্ক্ষী সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম খোকন বলেন, "আমরা দীর্ঘদিন একসঙ্গে কাজ করেছি, একসঙ্গে আড্ডা দিয়েছি। শিক্ষক হিসেবে তিনি ছিলেন সবার প্রেরণার উৎস। আজীবন শিক্ষাসেবায় নিবেদিত এই মানুষটি নিজের দায়িত্ববোধ, সততা ও ভালোবাসা দিয়ে প্রজন্ম গড়েছেন। বিদ্যালয়ের প্রতিটি শিক্ষার্থী ও সহকর্মীর কাছে তিনি ছিলেন আপনজনের মতো। আমি মনে করি তাঁর মৃত্যুতে আমরা একজন আদর্শ শিক্ষক ও অভিভাবকসুলভ মানুষকে হারালাম। দিন দিন আমরা গুণীজনদের হারিয়ে ফেলছি।"

প্রয়াত শিক্ষকের সাবেক ছাত্র সাংবাদিক মাহমুদুল হাসান বলেন, "কলেজে গেলে স্যার আমাকে দেখা মাত্রই ডাক দিতেন, আমাদের খোঁজ খবর নিতেন। স্যার শুধু আমাদের শিক্ষকই ছিলেন না, ছিলেন একজন অভিভাবকও। তিনি শিক্ষার পাশাপাশি আমাদের মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করতেন। তাঁর প্রতিটি কথা এখনো কানে বাজে। আজ তিনি আমাদের মাঝে নেই, কিন্তু তাঁর শেখানো আদর্শ আমাদের জীবনের প্রেরণা হয়ে থাকবে।"

আজ পাথরঘাটা কলেজ মাঠে জোহরের নামাজের পর প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর তাঁর গ্রামের বাড়ি বরগুনার নলী চরকগাছিয়ায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে দ্বিতীয় জানাজার পর পারিবারিক কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়।

Link copied!