তাহিরপুরে দুই পক্ষের উত্তেজনা চরমে, সংঘর্ষে অন্তত ২৪ জন আহত

মোঃ আঃ মান্নান , হাওর অঞ্চল (সুনামগঞ্জ) সংবাদদাতা

প্রকাশিত: ০৭ ডিসেম্বর, ২০২৫, ০৭:০৪ পিএম

সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার উত্তর বড়দল ইউনিয়নের আমতৈলী (পূর্ব হাঁটি উত্তর পাড়া) এলাকায় পূর্বসূত্রতার জের ধরে দুই পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষে অন্তত ২৪ জন আহত হয়েছেন। শনিবার সন্ধ্যা থেকে শুরু হওয়া উত্তেজনা রোববার সকাল পর্যন্ত বিস্তৃত হয়ে দুই পক্ষের মধ্যে মারধর, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনাও ঘটেছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শনিবার সন্ধ্যার পরে আমতৈলী মধ্যপাড়া চান মিয়ার দোকানে সুরুজ আলীর নেতৃত্বে ১০–১৫ জন মুসলিম মিয়াকে মারধর করে আহত করে। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে রাতেই তাহিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন।

এর আগে বিকেলে একতা বাজারে প্রতিপক্ষ আবু চান গ্রুপের লোকজন সুরুজ আলীর গ্রুপের আনোয়ার হোসেনকে ডেকে নেয়, কিন্তু আনোয়ার পরিস্থিতি বুঝে কৌশলে বাজার ত্যাগ করে বাড়ি ফিরে আসে।

এইদিন শনিবার রাত ৮টার দিকে চান মিয়ার দোকানে আনোয়ার হোসেনের ফুফাতো ভাই মুসলিমের সঙ্গে কথাকাটাকাটির এক পর্যায়ে তাকে আবারও সংঘর্ষ হয় এতে মুসলিম মেয়ে আহত হয়। এরপর আবু চান গ্রুপের নেতৃত্বে আনোয়ারের চাচা–শুশুর সামসুল রহমানের বাড়িতে ভাঙচুর চালায়।

৭ ডিসেম্বর রোববার সকাল ৬টার দিকে আবু চান নেতৃত্বাধীন শতাধিক লোকজন সুরুজ আলীর বাড়িতে হামলা চালায়। এতে দুই গ্রুপের মধ্যে তীব্র সংঘর্ষ বাঁধে। আহতদের তাহিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

আবু চান গ্রুপের আক্তার মিয়া বলেন—মুসলিমকে শনিবার রাতে মারধর করার পর রবিবার সকালে আবারও সুরুজ আলীর নেতৃত্বে আসুক মিয়া ও লাইলীর ওপর হামলা চালানো হয়। এতে দুই পক্ষের সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে।

মোঃ জহির মিয়া জানান—মুসলিমের বাড়ির নতুন দরজা, জানালা, হাড়ি–পাতিলসহ মালামাল লুটপাট করেছে। আমরা কাউকে একতা বাজারে এটাক করিনি, শনিবার রাতে মুসলিমকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাই।

সুরুজ আলী পক্ষের জাহানারা বেগম অভিযোগ করেন শনিবার রাতে ৫০–৬০ জন লোক আমার বাড়িতে হামলা চালিয়ে নগদ ৫০ হাজার টাকা লুট করে নিয়ে যায়। তারা হুমকি দিয়ে চলে যায়।

সুরুজ আলী গ্রুপের মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন বলেন—আমরা তখনো ঘুম থেকে উঠিনি। হঠাৎ আবু চান এর লোকজন এসে আমাদের বাড়িতে ইটপাটকেল মারতে থাকে। আমরা প্রতিরোধ করি। তারা প্রায় এক কিলোমিটার দূর থেকে এসে হামলা চালায় এতে আমাদের ১৫ জন লোক আহত হয়েছে। 

আবু চান গ্রুপের আহতরা: লাইলী বেগম, চান বাদশা, আশিক নুর, ময়না আক্তার, রাকিব, মমিন, আবুল বাদশা, হারুন মিয়া, আবু চান। এছাড়াও আরো আছে বলে জানা যায়।

এইদিকে সুরুজ আলী গ্রুপের আহতরা: দিলোয়ার, হৃদয়, তৌফিক, জাকির, ফিরুজ খাতুন, জয়দর আলী, শরিফ, শাহ আলম, হায়দার আলী, আমির আলী, মনির হোসেন, আনোয়ার, নজীর হোসেন, জালাল হোসেন।

প্রায় এক বছর আগে স্থানীয় একটি দোকানে বিস্কুট খাওয়া কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়, যা এখনো চলমান। স্থানীয়রা বলছেন, সেই বিরোধ থেকেই পরপর সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়েছে।

তাহিরপুর থানা সূত্রে জানাজায় এখন পর্যন্ত থানায় কোন অভিযোগ বা মামলা দায়ের হয়নি, তবে ঘটনাস্থল পুলিশ পরিদর্শন করেছে, অভিযোগ পেলে তদন্ত অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Advertisement

Link copied!