সিলেট কারাগারে আটক ফ্যাসিস্ট হাসিনার দোসর নেতাকর্মীদের হামলার শিকার কারারক্ষী

ফয়সাল হাওলাদার , সিনিয়র ক্রাইম রিপোর্টার

প্রকাশিত: ১৪ মার্চ, ২০২৫, ০৩:৫৩ পিএম

২৩ ফেব্রুয়ারী দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকা সিলেট পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগারটিকে সিলেট মেট্রোপলিটন কারাগার নামে নামকরণ করে পুনরায় চালু করা হয়েছে। কারাগারটিকে চালু করার জন্য সিলেট বাধাঘাটে অবস্থিত নতুন কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে প্রায় সাড়ে চার শত জন আসামি পুরাতন কারাগারে স্থানান্তর করা হয়। সিলেট পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগারটি বর্তমানে সাড়ে চারশত আসামি নিয়ে পুরাপুরি সচল। সাড়ে চারশত আসামি মধে ৩০০ জন আসামিই হচ্ছে পলাতক স্বৈরাচার হাসিনার দোসর নেতাকর্মী।

সিলেট মেট্রোপলিটন কারাগারের কারা কর্তৃপক্ষ আটক ফ্যাসিস্ট হাসিনার দোসর নেতাকর্মীদেরকে বিশেষ সুযোগ সুবিধা দিয়ে রেখেছে। অন্যান্য সাধারণ আসামিরা ১ হাত জায়গার মধ্যে থাকার সিট বানিয়ে থাকছে আর আওয়ামী দোসর নেতাকর্মীরা একেকজন ৩/৪ হাত জায়গার মধ্যে সিট বানিয়ে আরামভাবে থাকছে, কারাগারে থেকে পাচ্ছে বাহিরের বিরিয়ানি থেকে শুরু করে অন্যান্য সকল ভালো ভালো খাবার। যার ফলে আটক আওয়ামী দোসর আসামিরা অতি প্রশ্রয়ে মাথায় উঠে মানছেনা কারা কর্মচারীদেরকেও।

এই আওয়ামী দোসর নেতাকর্মীরা কারাগারের ভিতরেও ৩/৪ গ্রুপে পরিনত হয়েছে। গতকাল দুই গ্রুপে মারামারি করে, একপর্যায়ে দায়িত্বরত থাকা ময়মনসিংহ বিভাগের কারারক্ষী নং ১২৫২৯ বিলাল নামের এক কারারক্ষী মারামারি থামাতে গেলে আওয়ামী দোসর নেতাকর্মীরা কারারক্ষী বিলাল ও সিআইডি আসামি কয়েদী কালামকে মেরে আহত করে।

তাতে কারা কর্তৃপক্ষ কোন ভূমিকাই নেয়নি। বরং কারা কর্তৃপক্ষ কারারক্ষী বিলালকে বলে উক্ত ঘটনা যাতে কাউকে বলাবলি না করে। এ নিয়ে আমরা ময়মনসিংহ বিভাগের কারারক্ষীরা দুঃখ প্রকাশ করছি এবং এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই।

উল্লেখ্য, সিলেট পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগারটি ১৭৮৯ সালে ব্রিটিশ আমলের তৈরি ২২৭ বছরের অতি পুরাতন একটি কারাগার। এই কারাগারটি ২০১৮ সাল থেকে বাজেয়াপ্ত ছিলো। কারাগারটি প্রায় অচল।  কারাগারের ভবনগুলো ঝুকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। যেকোন মুহুর্তে ভবনগুলো ধশে পড়ে বন্দীদের মৃত্যু হতে পারে।

কারাগারের প্রাচীর গুলোও অকেজো অবস্থায় আছে, যেকোনো এ অকেজো প্রাচীর ধশে পড়ে ডিউটিরত কারারক্ষীদের মৃত্যু হতে পারে এবং আসামি পলায়ন করতে পারে। ২২৭ বছর আগের তৈরি এই প্রাচীন কারাগারটি কোনরুপ পুননির্মাণ কাজ না করেই কারা কর্তৃপক্ষ তড়িঘড়ি করে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার ১ (নতুন কারাগার) থেকে আসামি স্থানান্তর করে নিয়ে এসেছে, এবং দেশের বিভিন্ন বিভাগ থেকে বছরে  মাত্র ২০ দিন ছুটি দিয়ে কাকরি করা সামান্য বেতনের কারারক্ষীদেরকে বিভাগের বাহিরে বদলি দিয়ে সিলেটে নিয়ে এসেছে। যা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক।

কারারক্ষীরাও তাদের বউ বাচ্ছা ও অসুস্থ মা- বাবা রেখে নিরুপায় হয়ে বিভাগের চাকরি করছে। বিভাগের বাহিরে চাকরি করতে এসেও আওয়ামী দোসর আসামিদের হাতে মার খেয়েছে। মূলত অতিরিক্ত ইনকামের জন্যই সিলেট কারা কর্তৃপক্ষ কোনপ্রকার পুননির্মাণ কাজ ছাড়াই তড়িঘড়ি করে সিলেটের এই অকেজো পুরাতন কারাগারটি চালু করেছে,, কারন একটা কারাগার বাড়লে কর্তৃপক্ষের অনেক টাকা ইনকামও বাড়ে।

উল্লেখ্যঃ গত ৫ ই আগষ্টে স্বৈরাচার হাসিনা পলাতকের পর দেশের প্রায় সব কারাগারেই ঝামেলা ও বন্দী বিদ্রোহ হয়। নরসিংদী জেলা কারাগার থেকে ৯০০ আসামি চিনিয়ে নেওয়া হয়। দেশের প্রায় কারাগার গুলো জঙ্গি হামলা ও সন্ত্রাসী হামলার ঝুকিপূর্ণ। সিলেট মেট্রোপলিটন পুরাতন কারাগারে আটক আওয়ামী দোসর আসামিরা যেভাবে উশৃংখল, অতিশীঘ্রই সিলেট মেট্রোপলিটন পুরাতন কারাগারে বন্দী পলায়ন ও মারামারির ঘটনায় কারারক্ষী ও বন্দীদের মৃত্যু হওয়ার মতো আপত্তিকর ঘটনা ঘটবে। 

তাই ২২৭ বছর আগের ব্রিটিশ আমলে তৈরি এই অকেজো পুরাতন কারাগারটিকে আপাতত সময়ের জন্য বন্ধ করে দেওয়া অতি জরুরি।

Link copied!