গাজীপুর মহানগরীর পূবাইল থানার ৩৯ নং ওয়ার্ডের হায়দরাবাদ এলাকার আত তাকওয়া মসজিদের পাশে অবৈধভাবে জবাই করা ঘোড়ার মাংস উদ্ধার করেছে স্থানীয় প্রশাসন। সোমবার সকালে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে ঘোড়া জবাইকারী চক্রের মূল হোতা শফিকুর রহমানকে আটক করা হয়। তবে অবাক করার বিষয় হলো, তাকে মাত্র ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করে ছেড়ে দেওয়া হয়।
এ ঘটনায় ক্ষোভে ফেটে পড়েছে এলাকাবাসী। তারা অভিযোগ করেছেন, কোটি কোটি টাকার এই অবৈধ ঘোড়ার মাংস ব্যবসার সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে জড়িত শফিকুর রহমান প্রভাবশালী রাজনৈতিক যোগাযোগ ব্যবহার করে বারবার পার পেয়ে যাচ্ছেন। এর আগে প্রাণিসম্পদ বিভাগ এ স্থানটি সিলগালা করে দিয়েছিল, কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই তিনি পুনরায় একই স্থানে ঘোড়া জবাই শুরু করেন।
এদিকে, প্রশাসনের ভূমিকাকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও সমালোচনার ঝড় উঠেছে। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন,অবৈধভাবে জবাই করা ঘোড়ার মাংস যখন সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ছে, তখন মাত্র জরিমানা দিয়ে ছাড়া কতটা ন্যায্য?’
গাজীপুর মহানগর প্রশাসনের এক কর্মকর্তা বলেন, ঘটনাটি তদন্ত করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” তবে স্থানীয়রা বলছেন, এর আগেও এমন প্রতিশ্রুতি অনেকবার এসেছে, কিন্তু কার্যকর কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫টি ঘোড়া জবাই করে এই চক্রটি ঢাকা, গাজীপুরসহ দেশের বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে মাংস সরবরাহ করে থাকে। স্থানীয়দের ধারণা, এই মাংস বিভিন্ন হোটেল-রেস্টুরেন্টে গরু বা খাসির মাংস বলে বিক্রি করা হচ্ছে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, শফিকুর রহমান দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতার ছত্রচ্ছায়ায় থেকে এই ব্যবসা চালিয়ে আসছেন। তিনি প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকা দিয়ে প্রশাসন ও প্রভাবশালীদের ম্যানেজ করেন। সোমবার তার ধরা পড়ার পর স্থানীয় কিছু বিএনপি নেতার সুপারিশে এক মাসের কারাদণ্ড মওকুফ করে মাত্র জরিমানা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ উঠেছে।
এই ঘটনায় জনমনে চরম ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বলেন, এত বড় অপরাধ করে মাত্র ২৫ হাজার টাকা জরিমানা দিয়ে ছাড়া মানে প্রশাসন জনগণের সঙ্গে তামাশা করছে। আমরা এ ঘটনায় স্বচ্ছ তদন্ত ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।
প্রাণিসম্পদ বিভাগের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন,আমরা আগেও এ স্থানটি সিলগালা করেছিলাম। নানা ধরনের রাজনৈতিক চাপে ও সুপারিশে বিষয়টি নিয়ে আমরা অসহায়।
এলাকাবাসী দ্রুত এই অবৈধ মাংস ব্যবসা বন্ধ ও জড়িতদের কঠোর শাস্তির দাবিতে আগামী কয়েক দিনের মধ্যে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছেন।
আপনার মতামত লিখুন :