ভুয়া ব্যাংক পেমেন্ট, জাল এলসি ও বিদেশি লেনদেনের ফাঁদে দেশীয় লাম মিম অ্যাপারেলস লিমিটেড কোম্পানির কোটি টাকার ক্ষতি করেছে ভারতীয় নাগরিক জগদীশ সিং। ঢাকার আদালতে হা-মিম অ্যাপারেলস লিমিটেড কোম্পানির পক্ষে নজরুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলা করলে প্রতারক জগদীশ সিং কে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
জানা যায়, ঢাকা মহানগরীতে আলোচিত এক আর্থিক প্রতারণার নাটকীয় পরিসমাপ্তি ঘটেছে। তুলা আমদানি ব্যবসার ছদ্মবেশে প্রায় ২০ কোটি টাকারও বেশি অর্থ আত্মসাৎকারী ভারতীয় নাগরিক পরিচয়ধারী প্রতারক জগদীশ সিং (৩৯) অবশেষে পুলিশের হাতে ধরা পড়েছেন। রাজধানীর উত্তরার সেক্টর–৯, রোড–২৩, ফ্ল্যাট–৩১ নম্বর বাসা থেকে ঢাকা মহানগর পুলিশের একটি বিশেষ টিম অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করে।
আশুলিয়া লাম মিম অ্যাপারেলস লিমিটেড কোম্পানির পক্ষে নজরুল ইসলাম আদালতে মামলা দায়েরের পর থেকেই পুলিশ জগদীশের অবস্থান শনাক্তে তৎপর হয়। দীর্ঘদিন গা-ঢাকা দিয়ে থাকার পর গত সপ্তাহে অবশেষে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়েন তিনি।
পুলিশ জানিয়েছে, জগদীশ সিং তুলা আমদানি ব্যবসার আড়ালে ভুয়া ব্যাংক পেমেন্ট রসিদ, জাল ট্রান্সফার স্লিপ, ইনভয়েস ও এলসি ডকুমেন্ট তৈরি করে একাধিক দেশীয় ব্যবসায়ীর আস্থা অর্জন করেন। প্রথমে সামান্য লেনদেনের মাধ্যমে আস্থা তৈরি করে পরে বড় অঙ্কের চুক্তি ও অর্থ লেনদেনে প্রবেশ করেন। কিন্তু প্রকৃত অর্থ কোথাও না পাঠিয়ে জাল কাগজপত্র ও ভুয়া আন্তর্জাতিক পেমেন্টের কৌশল দেখিয়ে প্রতারণা চালিয়ে যান।
ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন, “জগদীশ সিং কৌশলে আমাদের প্রতিষ্ঠানের আস্থা অর্জন করে ব্যাংক পেমেন্টের ভুয়া নথি দেখিয়ে প্রায় ২০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে। এটি শুধু অর্থনৈতিক অপরাধ নয়, দেশের বাণিজ্যিক সুনাম নষ্ট করার অপচেষ্টা।”
পুলিশের হাতে আটক জগদীশ সিং প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রতারণার কথা স্বীকার করেছেন। তার কাছ থেকে বেশ কিছু ব্যাংক চেক, জাল ইনভয়েস, বিদেশি ট্রান্সফার স্লিপ ও নকল পেমেন্ট ভাউচার জব্দ করা হয়েছে। তিনি নিজেকে ‘বৈধ রপ্তানিকারক’ পরিচয়ে বিভিন্ন কোম্পানিকে ফাঁদে ফেলতেন।
পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, জগদীশ সিংয়ের বিরুদ্ধে প্রতারণা, অর্থ আত্মসাৎ ও মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে মামলা দায়ের হয়েছে। তদন্তে আরও বেশ কয়েকটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের নাম আসতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ভুক্তভোগীদের দাবি, এই প্রতারকের শাস্তি দ্রুত নিশ্চিত না করলে এ ধরনের আর্থিক অপরাধ আরও বাড়বে। আমরা তার সহযোগীদেরও চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
এদিকে অর্থ আত্মসাতের এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ব্যবসায়ী মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। অনেকে বলছেন, বিদেশি নাগরিক পরিচয়ে দেশে ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে আরও কঠোর নজরদারি ও যাচাই প্রক্রিয়া জরুরি।
ঢাকা মহানগর পুলিশ জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক লেনদেন, ব্যাংক ও অনলাইন ট্রান্সঅ্যাকশন বিশ্লেষণ করে প্রতারণার পূর্ণ চিত্র উদ্ঘাটনে কাজ চলছে। পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, এটি পরিকল্পিত আর্থিক অপরাধ। আমরা মনে করছি, জগদীশ সিং একা নয়—তার সঙ্গে একটি সংঘবদ্ধ চক্র জড়িত।
দেশজুড়ে আলোচিত এই ২০ কোটি টাকার প্রতারণা এখন ব্যবসায়ী ও প্রশাসনের নজরে শীর্ষে—উত্তরার জগদীশ সিং গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে শুরু হলো ‘প্রতারক সাম্রাজ্য’ উন্মোচনের নতুন অধ্যায়।
আপনার মতামত লিখুন :