গাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার একটি নির্মম ঘটনায় চোর সন্দেহে এক কিশোরকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। নিহত কিশোরের নাম হাসান (১৬)।
তিনি চাঁদপুর জেলার সদর থানার বিশ্বনদী গ্রামের কবির হোসেনের ছেলে। পরিবারসহ বোর্ডবাজারের মাসুদ খানের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন।
শুক্রবার (১০ অক্টোবর)ভোরে আজানের আগে পার্শ্ববর্তী দেলোয়ারদের বাড়িতে হাতমুখ ধোয়ার জন্য গেলে দেলোয়ার ও আরও কয়েকজন তাকে ও তার ভাইকে চোর সন্দেহে ধরে বেঁধে ফেলে বেদম প্রহার করে। বড় ভাই কোনোমতে পালিয়ে গেলেও হাসান রক্ষা পায়নি।
গুরুতর আহত অবস্থায় প্রথমে স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে তাকে উত্তরা ও পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে আট দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে ঘটনার ৮দিন পর মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে শনিবার (১৮ অক্টোবর) সকাল ৯ টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে হাসান মারা যায়।
স্থানীয়রা জানান, হাসান তার বড় ভাইয়ের সঙ্গে স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় পড়াশোনা করতেন। প্রায় আট দিন আগে পারিবারিক অভিমান নিয়ে তারা বোর্ডবাজার বড় মসজিদের বারান্দায় আশ্রয় নেন।
দুপুরে মরদেহ বোর্ডবাজার এলাকায় পৌঁছলে এলাকাবাসী ও স্বজনরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। তারা মানবিক মূল্যবোধের এই অবক্ষয় ও ন্যায়বিচারের নামে গঠিত মব জাস্টিসের তীব্র নিন্দা জানিয়ে হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও ফাঁসির দাবি করেন।
এদিকে, গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের গাছা থানার ওসি (তদন্ত) জানান, “ঘটনার তদন্ত চলছে। ইতিমধ্যে সালাউদ্দিন ও সাকিল নামে দুজনকে আটক করা হয়েছে। অন্য জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হবে।”
স্থানীয় মানবাধিকার কর্মীরা বলেন, একটি কিশোরের জীবন এভাবে চলে যাওয়া শুধু একটি পরিবারের নয়, পুরো সমাজের জন্য এক ভয়াবহ সংকেত। বিচার ব্যবস্থার প্রতি আস্থা হারিয়ে জনতা যখন নিজেই বিচারক হয়ে ওঠে, তখন সেটিই সামাজিক অবক্ষয়ের সবচেয়ে বড় রূপ।
মব জাস্টিসের এই নির্মমতা আজ আবারও প্রশ্ন তুলেছে, আমরা কি সত্যিই মানবিক বাংলাদেশে বাস করছি?
আপনার মতামত লিখুন :